প্রথম ব্যক্তি বলিলেন, “এই ব্রাহ্মণ আমাকে দক্ষিণার সহিত একটি গাভী প্রদান করিয়াছেন। আমি ইঁহাকে তাহা প্রত্যর্পণ করিতেছি, কিন্তু ইনি আমার হাত হইতে তাহা কেন গ্রহণ করিবেন না?” অপর ব্যক্তি বলিলেন, “আমি ইহা প্রথমে গ্রহণ করি নাই, আর ইহা প্রার্থনাও করি নাই, তবে ইনি কেন ইহা আমাকে বলপূর্ব্বক গ্রহণ করাইতে ইচ্ছা করিতেছেন?”
২২২
রাজা ইহা শুনিয়া বলিলেন, “এই অভিযোগকারীর অভিযোগ ঠিক নেহ। আপনি গাভী গ্রহণ করিবার পর যিনি ইহা দিয়াছেন তাঁহাকেই আবার বলপূর্ব্বক ফিরাইয়া দিতেছেন কেন?” রাজা ইহা বলিলে ইন্দ্র অবসর পাইয়া তাঁহাকে বলিলেন, “হে রাজন্, আপনি যদি ইহাই ন্যায্য বলিয়া জানেন, তবে ঐ জপকারী ব্রাহ্মণের নিকট প্রার্থনা করিয়া তৎপরে প্রাপ্ত বরটি তাঁহার নিকট হইতে গ্রহণ করিতেছেন না কেন?” রাজা ইহার উত্তর ভাবিয়া না পাইয়া সেই জপকারী ব্রাহ্মণকে বলিলেন, “ভগবন্, আপনার জপের অর্দ্ধেক অংশের ফল বররূপে আমাকে প্রদান করুন।” অনন্তর সেই জপকারী ব্রাহ্মণ বলিলেন, “ভালো, আমার জপের অর্দ্ধেক ফল তুমি গ্রহণ করো।” এই বলিয়া তিনি রাজাকে বর প্রদান করিলেন। রাজা এই বরের দ্বারা সর্ব্বলোকেই নিজের গতি লাভ করিলেন এবং সেই জপকারীও শিবলোক প্রাপ্ত হইলেন।
২২৩
আর এক প্রকারে পৃথিবীর ধ্বংস ঘটিতে পারে। একটি প্রকাণ্ড উল্কাপ্রস্তর কোনও একদিন আকাশ হইতে পড়িতে পারে। বস্তুত প্রস্তরখণ্ড আকাশ হইতে পৃথিবীতে পড়িতেছেই। এইরূপ নানা আয়তনের প্রস্তর মিউজিয়ামে দেখা যায়, তাহাদের কোনো-কোনোটা ওজনে বহুশত পাউণ্ড ভারী। এমন হইতে পারে কোনও এক সময়ে বহুশত মাইল আয়তনের পাথর পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইবে। সমুদ্রের মধ্যে পড়িয়া সমস্ত মহাদেশগুলিকে ডুবাইয়া দিবার উপযুক্ত তরঙ্গের সৃষ্টি করিবার জন্য এতবড়ো প্রকাণ্ড শিলাখণ্ডের প্রয়োজন হয় না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন-সকল শক্তি আছে, যাহার সহিত তুলনা করিলে মানবের মধ্যে যে প্রবলতম তাহারও শক্তি একটি মশকের লীলার মতো; সে এমন শক্তি যাহার আঘাতে, বাতাসের এক দমকায় একপাল মশার মতো, সমস্ত মানুষকে পৃথিবী হইতে উড়াইয়া দিতে পারে।
২২৪
জীবনসংগ্রামে গত কল্য যেমন যোগ্যতমরাই টিঁকিয়াছিল, আগামী কল্যও ঠিক সেইরূপই ঘটিবে; কিন্তু অতীত কালে স্বার্থরক্ষাই যেমন যোগ্যতার পরিমাপক ছিল, ভবিষ্যতে সেইরূপ প্রেমের বিস্তৃতি ও গভীরতা-দ্বারাই উদ্বর্ত্তনের মূল্যনির্দ্ধারণ হইবে। বর্ত্তমান বিজ্ঞানে এই যে শিক্ষা দিতেছে যে, কোনো মনুষ্যই একাকী কেবল আপনাকে লইয়া বাঁচিয়া থাকিতে পারে না, ইতঃপূর্ব্বে এমন করিয়া শিক্ষা আর কখনও দেওয়া হয় নাই। মনুষ্যকে যখন জঙ্গল ও প্রান্তরের বন্যপশুদের সঙ্গে লড়াই করিয়া চলিতে হইত তখন প্রাণরক্ষার জন্য ব্যক্তিদের মধ্যে এবং তাহার পরে পরিবারগণের মধ্যে পরস্পর-সহকারিতা উহাদের পক্ষে একান্ত আবশ্যক ছিল। এক্ষণে পৃথিবীতে মানবজাতির অনবিচ্ছিন্ন জীবন-ধারণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গোত্র ও National-এর পরস্পরের মধ্যে আরও অনেক অধিক সহকারিতার প্রয়োজন হইয়াছে। এক্ষণে এবং চিরকালই যেসকল ব্যক্তি বা জনসংঘ ক্রমবিকাশের অনুসারে মহা পুরোযাত্রার সময়ে না চলিবে তাহাদের ভাগ্যে বিনাশ রহিয়াছে।