পরদিন ভূপতি আবার অসময়ে শয়নঘরে আসিয়া চারুকে ডাকাইয়া আনাইল। কহিল, “চারু, অমলের বেশ একটি ভালো বিবাহের প্রস্তাব এসেছে।”
চারু অন্যমনস্ক ছিল। কহিল, “ভালো কী এসেছে।”
ভূপতি। বিয়ের সম্বন্ধ।
চারু। কেন, আমাকে কি পছন্দ হল না।
ভূপতি উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। কহিল, “তোমাকে পছন্দ হল কি না সে কথা এখনো অমলকে জিজ্ঞাসা করা হয় নি। যদি বা হয়ে থাকে আমার তো একটা ছোটো খাটো দাবি আছে, সে আমি ফস্ করে ছাড়ছি নে।”
চারু। আঃ, কী বকছ তার ঠিক নেই। তুমি যে বললে, তোমার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। চারুর মুখ লাল হইয়া উঠিল।
ভূপতি। তা হলে কি ছুটে তোমাকে খবর দিতে আসতুম? বকশিশ পাবার তো আশা ছিল না।
চারু। অমলের সম্বন্ধ এসেছে? বেশ তো। তা হলে আর দেরি কেন।
ভূপতি। বর্ধমানের উকিল রঘুনাথবাবু তাঁর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমলকে বিলেত পাঠাতে চান।
চারু বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিলেত? ”
ভূপতি। হাঁ,বিলেত।
চারু। অমল বিলেত যাবে? বেশ মজা তো। বেশ হয়েছে, ভালোই হয়েছে তা তুমি তাকে একবার বলে দেখো।
ভূপতি। আমি বলবার আগে তুমি তাকে একবার ডেকে বুঝিয়ে বললে ভালো হয় না?
চারু। আমি তো তিন হাজার বার বলেছি। সে আমার কথা রাখে না। আমি তাকে বলতে পারব না।
ভূপতি। তোমার কি মনে হয়, সে করবে না?
চারু। আরো তো অনেকবার চেষ্টা দেখা গেছে, কোনোমতে তো রাজি হয় নি।
ভূপতি। কিন্তু এবারকার এ প্রস্তাবটা তার পক্ষে ছাড়া উচিত হবে না। আমার অনেক দেনা হয়ে গেছে, অমলকে আমি তো আর সেরকম করে আশ্রয় দিতে পারব না।
ভূপতি অমলকে ডাকিয়া পাঠাইল। অমল আসিলে তাহাকে বলিল, “বর্ধমানের উকিল রঘুনাথবাবুর মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তাঁর ইচ্ছে বিবাহ দিয়ে তোমাকে বিলেত পাঠিয়ে দেবেন। তোমার কী মত।”
অমল কহিল, “তোমার যদি অনুমতি থাকে, আমার এতে কোনো অমত নেই।”
অমলের কথা শুনিয়া উভয়ে আশ্চর্য হইয়া গেল। সে যে বলিবামাত্রই রাজি হইবে, এ কেহ মনে করে নাই।
চারু তীব্রস্বরে ঠাট্টা করিয়া কহিল, “দাদার অনুমতি থাকলেই উনি মত দেবেন। কী আমার কথার বাধ্য ছোটো ভাই। দাদার ’পরে ভক্তি এতদিন কোথায় ছিল, ঠাকুরপো? ”
অমল উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিল।
অমলের নিরুত্তরে চারু যেন তাহাকে চেতাইয়া তুলিবার জন্য দ্বিগুণতর ঝাঁজের সঙ্গে বলিল, “তার চেয়ে বলো-না কেন, নিজের ইচ্ছে গেছে। এতদিন ভান করে থাকবার কী দরকার ছিল যে বিয়ে করতে চাও না? পেটে খিদে মুখে লাজ! ”
ভূপতি উপহাস করিয়া কহিল, “অমল তোমার খাতিরেই এতদিন খিদে চেপে রেখেছিল, পাছে ভাজের কথা শুনে তোমার