![](/themes/rabindra/logo.png)
দ্বীপের ঐ অংশে যে বহুসংখ্যক বন্য মহিষ বাস করে, আমি প্রথমে অস্পষ্ট আলোকে এই দুইটিকে তাহাদেরই অপূর্ণ-বয়স্ক শাবক ভাবিয়াছিলাম। আমাকে যে পথ অতিক্রম করিয়া যাইতে হইবে তাহারই পার্শ্ববর্ত্তী একটি বৃহৎ বৃক্ষের অভিমুখে তাহারা মস্তক নত করিয়া অগ্রসর হইল এবং সেইখানে গাছের শিকড়ের চারি ধারে ঘ্রাণ করিয়া বেড়াইতে লাগিল। আমি এখন তাহাদের যথেষ্ট নিকটবর্ত্তী হওয়াতে দেখিতে পাইলাম যে, তাহারা অতি বৃহদাকার ভল্লুক। পার্শ্বে সরিয়া যাওয়া অসম্ভব ছিল, কারণ বনটি মহিষকণ্টক নামে খ্যাত একপ্রকার অতিদীর্ঘ কন্টক পূর্ণ হওয়াতে মনুষ্যের দুর্ভেদ্য ছিল। ফিরিয়া যাওয়ার কথা একবারও আমার মনে আসে নাই, বাস্তবপক্ষে আমার চিন্তা করিবার সময়ই ছিল না, কারণ, আমি এক্ষণে তাহাদের ত্রিশ পদের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছিলাম।
৩৭
তাহারা মস্তক উত্তোলন করিল এবং একটি হ্রস্ব গর্জ্জনে আপনাদের ক্রেধের পরিচয় দিল, উহার পরিবর্ত্তে আমি তাহাদের দিকে ধাবিত হইয়া উহাদের তিন গজের মধ্যে গিয়া পড়িলাম; তাহারা তবুও সরিয়া যাইবার কোন লক্ষণ প্রকাশ করিল না; তাহারা আমার দিকে অগ্রসর হইয়া আসিল। আমি তাহাদের দিকেই মুখ করিয়া এমন আড়ভাবে ঘুরিয়া চলিলাম, যাহাতে তাহাদের যে পার্শ্ব দিয়া আমাকে পথ অনুসরণ করিতে হইবে সেই দিকে পৌঁছিতে পারি। এমন সময়ে তাহারা আমার দিকে এক লম্ফ প্রদান করিল, আমি তাহাদের অভিমুখেই মুখ করিয়া পশ্চাতে লম্ফ দিয়া রক্ষা পাইলাম; ঐরূপে তাহারা পুনশ্চ একবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হইল; কিন্তু দেখিলাম তৃতীয় বারই আমার শেষবার হইবে।
৩৮
আমার এইটুকু কেবল মনে আছে যে, আমি গর্জ্জন ও আর্ত্তনাদের মাঝামঝি একটি ভীতধ্বনি করিয়াছিলাম এবং যখন পুরোবর্ত্তী প্রাণীটি আমার অভিমুখে উত্থিত হইল তখন আমার হাতে একটিমাত্র যে জিনিষ ছিল সেই ব্রাণ্ডির বোতলটি লইয়া আমার দেহের সমস্ত শক্তি দিয়া তাহার নাক ও দাঁতের উপর মারিলাম। বলা বাহুল্য, বোতলটি চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া ভাঙিয়া গেল এবং তাহার নাকের উপরে সেই আঘাতটিই হউক, অথবা চক্ষে ও মুখে ব্রাণ্ডি প্রবিষ্ট হইয়া তাহাকে বিস্মিত করিয়া দিল তাহাই হউক, অথবা এক সঙ্গে এই দুইটাতে মিলিয়াই হউক, তাহাকে ঘুরাইয়া দূরীভূত করিয়া দিল এবং তাহার সঙ্গী তাহার অনুসরণ করিল। বলিতে পারি, এই সমস্ত ব্যাপার এক মিনিটও সময় লয় নাই। উহার মধ্যে আমি একবারও উপস্থিত-বুদ্ধি হারাই নাই; বোধ হয় সময়ের অল্পতাই তাহার হেতু।
৩৯
আমাদের এখানে য়ুরোপ হইতে যেসকল আগন্তুক সব প্রথমে আসিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে স্পেনদেশীয় কন্সলবিভাগীয় কর্ম্মচারী Adolfo Rivadeneyra একজন। ইনি পারস্য দেশের ভিতর দিয়া ভ্রমণ করিতেছিলেন এবং জেরুজিলেমের কন্সল ছিলেন। তিনি আরবী ভাষা উত্তমরূপেই বলিতে পারিতেন; তিনি অত্যন্ত শ্যামবর্ণ ছিলেন এবং সহজেই আপনাকে আরব বলিয়া চালাইয়া দিতে পারিতেন। আমি যত মানুষ দেখিয়াছি তাহার মধ্যে নিকোলাস সম্ভবত সর্ব্বাপেক্ষা কুৎসিত, এই কথা আমি কয়েক মিনিট আগে বলিয়াছিলাম। রিভাডিনেইরা এই বিষয়ে প্রায় তাঁহার কাছ ঘেঁষিয়া গিয়াছিলেন। একদিন, সন্ধ্যাবেলায় আমাদের ভারী মজা লাগিল; দেখিলাম যে তিনি এবং নিকোলাস হাত ধরাধরি করিয়া আমাদের বসিবার ঘরে প্রবেশ করিলেন ও Madame Krebel-নাম্নী এক রুশীয় সেক্রেটারির পত্নীর সম্মুখে নতজানু হইয়া, তাঁহাদের উভয়ের মধ্যে কে বেশি কুৎসিত তাহাই স্থির করিয়া দিতে অনুরোধ করিলেন। মহিলাটি প্রস্তাব করিলেন যে, তাঁহারা উভয়েই এক সঙ্গে নিকটতম দর্পণের নিকটে দরখাস্ত পেশ করুন।