Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
বৈষ্ণব কবির গান,৪
বৈষ্ণব কবির গান
এই জন্য সংসারে থাকিয়া আমরা যেন চিরবিরহে কাল কাটাই। কানে একটি বাঁশির শব্দ আসিতেছে, মন উদাস হইয়া যাইতেছে, অথচ এ সংসারের অন্তঃপুর ছাড়িয়া বাহির হইতে পারি না। কে বাঁশি বাজাইয়া আমাদের মন হরণ করিল, তাহাকে দেখিতে পাই না; সংসারের ঘরে ঘরে তাহাকে খুঁজিয়া বেড়াই। অন্য যাহারই সহিত মিলন হউক না কেন, সেই মিলনের মধ্যে একটি চিরস্থায়ী বিরহের ভাব প্রচ্ছন্ন থাকে।
বিপরীত
আবার এক-এক দিন বিপরীত দেখা যায়। জগৎ জগৎপতিকে বাঁশি বাজাইয়া ডাকে। তাঁহার বাঁশি লইয়া তাঁহাকে ডাকে।—
আজু কে গো মুরলী বাজায়!
এ ত কভু নহে শ্যামরায়!
ইহার গৌর বরণে করে আলো,
চূড়াটি বাঁধিয়া কেবা দিল!
ইহার বামে দেখি চিকণবরণী,
নীল উয়লি নীলমণি॥
বিবাহ
জগতের সৌন্দর্য অসীম সৌন্দর্যকে ডাকিতেছে। তিনি পাশে আসিয়া অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। জগতের সৌন্দর্যে তিনি যেন জগতের প্রেমে মুগ্ধ হইয়া বাঁধা পড়িয়াছেন। তাই আজ জগতের বিচিত্র গান, বিচিত্র বর্ণ, বিচিত্র গন্ধ, বিচিত্র শোভার মধ্যে তাঁহাকে প্রতিষ্ঠিত দেখিতেছি। তাই আজ জগতের সৌন্দর্যের অভ্যন্তরে অনন্ত সৌন্দর্যের আকর দেখিতেছি। আমাদের হৃদয়ও যদি সুন্দর না হয়, তবে তিনি কি আমাদের হৃদয়ের মধ্যে আসিবেন?
অসীম ও সসীম এই সৌন্দর্যের মালা লইয়া মালা-বদল করিয়াছে। তিনি তাঁহার নিজের সৌন্দর্য ইহার গলায় পরাইয়াছেন, এ আবার সেই সৌন্দর্য লইয়া তাঁহার গলায় তুলিয়া দিতেছে। সৌন্দর্য স্বর্গ মর্তের বিবাহবন্ধন।