তদনন্তর মুনিশ্রেষ্ঠ বাল্মীকি সীতাসহিত জনবৃন্দমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া রামকে এইরূপ বলিতে লাগিলেন, “ হে দাশরথে, ধ র্ম চারিণী এই সীতা লোকাপবাদহেতু আমার আশ্রমসমীপে পরিত্যক্তা হইয়াছিলেন। এই অপাপা পতিপরায়ণা তোমার নিকট প্রত্যয় প্রদান করিবেন। ” রাম বাল্মীকিকর্ত্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া এবং সেই দেববর্ণিনী জানকীকে দেখিয়া, কৃতাঞ্জলিপূর্ব্বক, জনগণের সমক্ষে এইরূপ বলিতে লাগিলেন, “ হে ধর্ম ”, আপনি যাহা বলিতেছেন তাহাই সত্য। আপনার পবিত্র বাক্যেই আমার প্রত্যয় হইতেছে। এই জানকীকে আমি পবিত্রা মনে জানিয়াও শুদ্ধ লোকাপবাদভয়ে ত্যাগ করিয়াছি। কিন্তু আপনি আমাকে ক্ষমা করিবেন, সীতাশপথ-দর্শন-জন্য কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া সকলে সমাগত হইয়াছেন। ” তখন কাষায়বস্ত্রপরিধানা সীতা সকলকে সমাগত দেখিয়া অধোমুখী অধোদৃষ্টি এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া এইরূপ কহিতে লাগিলেন, “ আমি রাম ভিন্ন জানি না, আমার এই বাক্য যদি সত্য হয়, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন! ” বৈদেহী এইরূপ শপথ করিলে দিব্য সিংহাসন সহসা রসাতল হইতে আবির্ভূত হইল এবং সেই স্থলে পৃথিবীদেবী সীতাকে দুই বাহু-দ্বারা গ্রহণ করিলেন। সিংহাসনারূঢ়া সীতাকে রসাতলে প্রবেশ করিতে দেখিয়া তদুপরি স্বর্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল।
অথবা, নিম্নলিখিত কাব্যাংশ গদ্য করিয়া লিখ –
বিলাপ করেন রাম লক্ষ্মণের আগে,
ভুলিতে না পারি সীতা সদা মনে জাগে।
রাজ্যচ্যুত আমাকে দেখিয়া চিন্তান্বিতা
হরিলেন পৃথিবী কী আপন দুহিতা?
রাজ্যহীন যদ্যপি হয়েছি আমি বটে
রাজলক্ষী তথাপি ছিলেন সন্নিকটে।
আমার সে রাজলক্ষ্মী হারাইল বনে,
কৈকেয়ীর মনোভীষ্ট সিদ্ধ এতদিনে।
সৌদামিনী যেমন লুকায় জলধরে
লুকাইল তেমন জানকী বনান্তরে।
কনকলতার প্রায় জনকদুহিতা
বনে ছিল কে করিল তারে উৎপাটিতা।
দিবাকর নিশাকর, দীপ্ত তারাগণ
দিবানিশি করিতেছে তমো নিবারণ,
তারা না হরিতে পারে তিমির আমার -
এক সীতা বিহনে সকল অন্ধকার॥
উল্লিখিত কবিতার তৃতীয় ছত্রে চিন্তান্বিতা শব্দটি কাহার বিশেষণ?