কালিদাস ও বাল্মীকির কবিত্বে তিনি মুগ্ধ ছিলেন।
মনে আছে, একদিন তিনি আমার কাছে কুমারসম্ভবের প্রথম শ্লোকটি খুব গলা ছাড়িয়া আবৃত্তি করিয়া বলিয়াছিলেন, ইহাতে পরে পরে যে এতগুলি দীর্ঘ আ-স্বরের প্রয়োগ হইয়াছে তাহা আকস্মিক নহে— হিমালয়ের উদার মহিমাকে এই আ-স্বরের দ্বারা বিস্ফারিত করিয়া দেখাইবার জন্যই ‘দেবতাত্মা’ হইতে আরম্ভ করিয়া ‘নগাধিরাজ’ পর্যন্ত কবি এতগুলি আকারের সমাবেশ করিয়াছেন।
বিহারীবাবুর মতো কাব্য লিখিব, আমার মনের আকাঙ্খাটা তখন ঐ পর্যন্ত দৌড়িত। হয়তো কোনোদিন বা মনে করিয়া বসিতে পারিতাম যে, তাঁহার মতোই কাব্য লিখিতেছি— কিন্তু এই গর্ব উপভোগের প্রধান ব্যাঘাত ছিলেন বিহারীকবির ভক্ত পাঠিকাটি। তিনি সর্বদাই আমাকে এ কথাটি স্মরণ করাইয়া রাখিতেন যে, ‘মন্দঃ কবিযশঃ প্রার্থী’ আমি ‘গমিষ্যাম্যূপহাস্যতাম্’। আমার অহংকারকে প্রশ্রয় দিলে তাহাকে দমন করা দুরূহ হইবে, এ কথা তিনি নিশ্চয় বুঝিতেন— তাই কেবল কবিতা সম্বন্ধে নহে আমার গানের কণ্ঠ সম্বন্ধেও তিনি আমাকে কোনোমতে প্রশংসা করিতে চাহিতেন না, আর দুই-একজনের সঙ্গে তুলনা করিয়া বলিতেন তাহাদের গলা কেমন মিষ্ট। আমারও মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল। যে আমার গলায় যথোচিত মিষ্টতা নাই। কবিত্বশক্তি সম্বন্ধেও আমার মনটা যথেষ্ঠ দমিয়া গিয়াছিল বটে কিন্তু আত্মসম্মানলাভের পক্ষে আমার এই একটি মাত্র ক্ষেত্র অবশিষ্ট ছিল, কাজেই কাহারও কথায় আশা ছাড়িয়া দেওয়া চলে না— তা ছাড়া ভিতরে ভারি একটা দুরন্ত তাগিদ ছিল, তাহাকে থামাইয়া রাখা কাহারও সাধ্যায়ত্ত ছিল না।
১ প্রকাশ, ভারতী, আশ্বিন, ১২৮৭, পৃ ২৯৮। দ্র কবিতা ও সঙ্গীত, পঞ্চম গীত
২ প্রকাশ, ভারতী, শ্রাবণ, ১২৮৯, পৃ ১৬৫। দ্র মায়াদেবী, কাব্যগ্রন্থের শেষ গান