রবিবার সকালে বিষ্ণুর৫ কাছে গান শিখিতে হইত। তা ছাড়া প্রায় মাঝে মাঝে সতীনাথ দত্ত৬ মহাশয় আসিয়া যন্ত্রতন্ত্রযোগে প্রাকৃতবিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন। এই শিক্ষাটি আমার কাছে বিশেষ ঔৎসুক্যজনক ছিল। জ্বাল দিবার সময় তাপসংযোগে পাত্রের নীচের জল পাতলা হইয়া উপরে উঠে, উপরের ভারী জল নীচে নামিতে থাকে, এবং এইজন্যই জল টগবগ করে— ইহাই যেদিন তিনি কাচপাত্রে জলে কাঠের গুঁড়া দিয়া আগুনে চড়াইয়া প্রত্যক্ষ দেখাইয়া দিলেন সেদিন মনের মধ্যে যে কিরূপ বিস্ময় অনুভব করিয়াছিলাম তাহা আজও স্পষ্ট মনে আছে। দুধের মধ্যে জল জিনিসটা যে একটা স্বতন্ত্র বস্তু, জ্বাল দিলে সেটা বাষ্প আকারে মুক্তিলাভ করে বলিয়াই দুধ গাঢ় হয়, এ কথাটাও যেদিন স্পষ্ট বুঝিলাম সেদিনও ভারি আনন্দ হইয়াছিল। যে-রবিবারে সকালে তিনি না আসিতেন, সে-রবিবার আমার কাছে রবিবার বলিয়াই মনে হইত না।
ইহা ছাড়া, ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলের একটি ছাত্রের কাছে কোনো-এক সময়ে অস্থিবিদ্যা শিখিতে আরম্ভ করিলাম। তার দিয়া জোড়া একটি নরকঙ্কাল৭ কিনিয়া আনিয়া আমাদের ইস্কুলঘরে লটকাইয়া দেওয়া হইল।
ইহারই মাঝে এক সময়ে হেরম্ব তত্ত্বরত্ন মহাশয় আমাদিগকে একেবারে ‘মুকুন্দং সচ্চিদানন্দং’ হইতে আরম্ভ করিয়া মুগ্ধবোধের সূত্র মুখস্থ করাইতে শুরু করিয়া দিলেন। অস্থিবিদ্যার হাড়ের নামগুলা এবং বোপদেবের সূত্র, দুয়ের মধ্যে জিত কাহার ছিল তাহা ঠিক করিয়া বলিতে পারি না। আমার বোধ হয় হাড়গুলিই কিছু নরম ছিল।
বাংলাশিক্ষা যখন বহুদূর অগ্রসর হইয়াছে তখন আমরা ইংরেজি শিখিতে আরম্ভ করিয়াছি। আমাদের মাস্টার অঘোরবাবু মেডিকেল কলেজে পড়িতেন। সন্ধ্যার সময় তিনি আমাদিগকে পড়াইতে আসিতেন। কাঠ হইতে অগ্নি উদ্ভাবনটাই মানুষের পক্ষে
১ অক্ষয়কুমার দত্ত প্রণীত। বস্তুবিচার—? ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির বিচার’
২ সাতকড়ি দত্ত -প্রণীত
৩ হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৪৪-৮৪), দেবেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্র
৪ “হীরা সিং নামক শিখ পালোয়ান।” –প্রবাসী, মাঘ ১৩১৮, পৃ ৩৮৮
৫ বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী(১৮১৯-? ১৯০১)
৬? সীতানাথ ঘোষ(১২৪৮-৯০), দ্র প্রবাসী, মাঘ ১৩১৮, পৃ ৩৮৮, জৈষ্ঠ্য ১৩১৯, পৃ ২১৩
৭ দ্র ‘কঙ্কাল’, গল্পগুচ্ছ ১, রবীন্দ্র-রচনাবলী ১৬ (সুলভ ৮)