দেবদত্ত। যিনি দুঃখ পান তাঁকেই দুঃখ দিতে চাও তোমরা? জান না, বিচারের ভার ওঁর ’পরে নেই, রাজ্যশাসন করেন রাজা।
রত্নেশ্বর। মহারানী মা!
সুমিত্রা। কী বৎস, তুমি কে।
দেবদত্ত। ও কেউ না, নাম রত্নেশ্বর, এসেছে বুধকোট থেকে; এর বেশি ওর পরিচয় নেই। পায়ের ধুলো নিয়েই চলে যাবে। হল তো দর্শন — চল্ এখন ঘরে, আমার ব্রাহ্মণীর প্রসাদ পাবি।
সুমিত্রা। বুধকোট, সে তো শিলাদিত্যের শাসনে। বলো দেখি তার ব্যবহার কী রকম।
দেবদত্ত। মহারানী, এ-সব প্রশ্ন এখানকার কোকিলের ডাকের মধ্যে ভালো শোনাচ্ছে না। আমি ওকে কালই নিজে রাজসভায় নিয়ে যাব।
রত্নেশ্বর। রাজসভা! মহারানী, সেখানে কোনো আশা নেই বলেই এই উৎসবের প্রাঙ্গণে অভিযোগ এনেছি।
সুমিত্রা। কেন আশা নেই।
রত্নেশ্বর। শিলাদিত্য স্বয়ং রাজধানীতে উপস্থিত, আমাদের কান্না চাপা দেবার জন্যে। তিনি বসেন রাজার কানের কাছে, আমরা থাকি দূরে।
সুমিত্রা। কোনো ভয় নেই তোমার, কী বলতে চাও আমার কাছে বলো।
রত্নেশ্বর। সতীতীর্থ ভৃগুকূট পাহাড়ের তলে। আমাদেরই রাজকুলের মহিষী মহেশ্বরী সেখানে স্বামীর অনুমৃতা হয়েছিলেন, সে আজ পাঁচশো বছরের কথা।
সুমিত্রা। সেই সতীকাহিনী তো ভাটের মুখে শুনেছি আমার বিবাহদিনে।
রত্নেশ্বর। তাঁরই সিঁদুরের কৌটো সেখানে সমাধিমন্দিরে।
সুমিত্রা। সেই কৌটোর সিঁদুর বিবাহকালে আমিও পরেছি।
রত্নেশ্বর। আমাদের মেয়েরা তীর্থে যায়, সেই কৌটোর সিঁদুর মাথায় পরে পুণ্য কামনায়। এতকাল কোনো বাধা হয় নি।
সুমিত্রা। এখন কি বাধা ঘটেছে।
রত্নেশ্বর। হাঁ, মহারাণী।
সুমিত্রা। কিসের বাধা।
রত্নেশ্বর। শিলাদিত্য তীর্থদ্বারে কর বসিয়েছে। দরিদ্র মেয়েদের পক্ষে দুঃসাধ্য হল। হাত থেকে তাদের কঙ্কণ কেড়ে নিয়ে কর আদায় হচ্ছে।
সুমিত্রা। কী বললে! মহারাজের সম্মতি আছে এতে?
রত্নেশ্বর। রাজকার্যের রহস্য জানিনে, মা, কথা কইতে সাহস হয় না।
সুমিত্রা। ঠাকুর, বলো, এতে মহারাজের সম্মতি আছে?
দেবদত্ত। সম্মতির প্রয়োজন হয় না, এতে আয়বৃদ্ধি আছে।
সুমিত্রা। সত্য করে বলো, এই অর্থ রাজকোষ গ্রহণ করে?
দেবদত্ত। সেদিন সভাপণ্ডিত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন অগ্নি যা গ্রহণ করেন তাতে মলিনতা থাকে না, রাজার কর সেই অগ্নি।