রত্নেশ্বর। রাজার কাছে অপরাধী। তার প্রহরীকে প্রহার করে এখানে এসেছি।
দেবদত্ত। প্রহার করেছ? শুনে শরীর পুলকিত হল। এমন উগ্র পরিহাসের ইচ্ছা হঠাৎ কেন তোমার মনে উদয় হল।
রত্নেশ্বর। উৎসবে রাজার দর্শন মিলবে আশা করেই বহু কষ্টে রাজধানীতে এসেছি। দ্বারী বললে উৎসবের দ্বার বন্ধ। তাই তাকে মারতে হল। অভিযোগ করতে এলে যদি সাক্ষাৎ না মেলে অপরাধ করলে অন্তত সেই উপলক্ষে তো রাজার সামনে পৌঁছব।
দেবদত্ত। কোথাকার মূর্খ তুমি। তুমি কি মনে কর, বুধকোটের গোঁয়ারের হাতে রাজার প্রহরী মার খেয়েছে এ কথা সে মরে গেলেও স্বীকার করবে। তার স্ত্রী শুনলে যে ঘরে ঢুকতে দেবে না।
রত্নেশ্বর। ঠাকুর, অনেক দূর থেকে এসেছি।
দেবদত্ত। এখনো অনেক দূরেই আছ। রাজার দর্শন কি সহজে মেলে। যোজন গণনা করেই কি দূরত্ব।
রত্নেশ্বর। গ্রামের মানুষ, রাজদর্শনের রীতিনীতি বুঝি নে সেই জেনেই মহারাজ দয়া করবেন।
দেবদত্ত। নিজের বুদ্ধি থেকে বাহুবলে রাজদর্শনের যে রীতি তুমি উদ্ভাবন করেছ সেটা রাজধানীতে বা রাজসভায় প্রচলিত নেই। পারিষদবর্গের জন্যে দর্শনী কিছু এনেছ কি।
রত্নেশ্বর। আর কিছুই আনি নি আমার অভিযোগ ছাড়া, কিছু নেইও।
দেবদত্ত। গ্রামের মানুষ তা বুঝতে পারছি।
রত্নেশ্বর। কিসে বুঝলে, ঠাকুর।
দেবদত্ত। এখনো এ শিক্ষা হয় নি যে, রাজা তোমাদের মুখ থেকে শুনতে চান রাজ্যে সমস্তই ভালো চলছে, সত্যযুগ, রামরাজত্ব।
রত্নেশ্বর। সমস্তই যদি ভালো না চলে?
দেবদত্ত। তা হলে সেটা গোপন না করলে আরো মন্দ চলবে। রাজাকে অপ্রিয় কথা শোনানো রাজদ্রোহিতা।
রত্নেশ্বর। আমাদের প্রতি যদি উৎপাত হয়?
দেবদত্ত। হয় যদি তো সে তোমাদের প্রতিই হল। রাজাকে জানাতে গেলে উৎপাত হবে রাজার প্রতি।
রত্নেশ্বর। ঠাকুর, সন্দেহ হচ্ছে পরিহাস করছ।
দেবদত্ত। পরিহাস করেন ভাগ্য। বর্তমান অবস্থাটা বুঝিয়ে বলি। আজ ফাল্গুনের শুক্লাচতুর্দশী। এখানে চন্দ্রোদয়ের মুহূর্তে কেশরকুঞ্জে ভগবান মকরকেতনের পূজা, রাজার আদেশ। নাচগান বাজনা অনেক হবে, তার সঙ্গে তোমার কণ্ঠস্বর একটুও মিলবে না।
রত্নেশ্বর। না মিলুক, কিন্তু রাজার চরণ মিলবে।
দেবদত্ত। রাজাকে রাজসভায় পাওয়াই হচ্ছে পাওয়া, অস্থানে তাঁর অরাজকত্ব। অপেক্ষা করো, কাল নিজে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব।
রত্নেশ্বর। ঠাকুর, তোমাদের সবুর সয়। আমার যে সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে, প্রত্যেক মুহূর্ত অসহ্য। আমাদের সব চেয়ে দুর্ভাগ্য এই যে, যমযন্ত্রণাও যখন পাই, অপমানের শূলের উপর যখন চড়ে থাকি তখন অপেক্ষা করে থাকতে হয় রাজশাসনের জন্যে, নিজের হাত পঙ্গু। ধিক্ বিধাতাকে।
দেবদত্ত। এখন একটু থামো, ঐ মহারানী আসছেন। ওঁর কাছে আর্তনাদ করে ধৃষ্টতা কোরো না।
রত্নেশ্বর। আমার সৌভাগ্য, আপনি এসেছেন মহারানী, সমস্ত রাস্তা ওঁরই তো দর্শন কামনা করে এসেছি।