Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
গীতিমাল্য- ৩১, ১
৩১
“কে নিবি গো কিনে আমায়, কে নিবি গো কিনে?”
পসরা মোর হেঁকে হেঁকে বেড়াই রাতে দিনে।
এমনি কবে হায়, আমার
দিন যে চলে যায়,
মায়ার’পরে বোঝা আমার বিষম হল দায়।
কেউ বা আসে, কেউ বা হাসে, কেউ বা কেঁদে চায়।
মুকুট-মাথে অস্ত্র-হাতে রাজা এল রথে।
বললে হাতে ধরে, “তোমায়
কিনব আমি জোরে।”
জোর যা ছিল ফুরিয়ে গেল টানাটানি করে।
মুকুট-মাথে ফিরল রাজা সোনার রথে চড়ে।
দুয়ার খুলে বৃদ্ধ এল হাতে টাকার থলি।
করলে বিবেচনা, বললে,
“কিনব দিয়ে সোনা।”
উজাড় করে দিয়ে থলি করলে আনাগোনা।
বোঝা মাথায় নিয়ে কোথায় গেলেম অন্যমনা।
সুন্দরী সে বেরিয়ে এল বকুলতলার কাছে।
বললে কাছে এসে, “তোমায়
কিনব আমি হেসে।”
হাসিখানি চোখের জলে মিলিয়ে এল শেষে;
ধীরে ধীরে ফিরে গেল বনছায়ার দেশে।
ঝিনুক নিয়ে খেলে শিশু বালুতটের তলে।
পসরা মোর হেঁকে হেঁকে বেড়াই রাতে দিনে।
এমনি কবে হায়, আমার
দিন যে চলে যায়,
মায়ার’পরে বোঝা আমার বিষম হল দায়।
কেউ বা আসে, কেউ বা হাসে, কেউ বা কেঁদে চায়।
মধ্যদিনে বেড়াই রাজার পাষাণ-বাঁধা পথে,
মুকুট-মাথে অস্ত্র-হাতে রাজা এল রথে।
বললে হাতে ধরে, “তোমায়
কিনব আমি জোরে।”
জোর যা ছিল ফুরিয়ে গেল টানাটানি করে।
মুকুট-মাথে ফিরল রাজা সোনার রথে চড়ে।
রুদ্ধ্ব দ্বারের সমুখ দিয়ে ফিরতেছিলেম গলি।
দুয়ার খুলে বৃদ্ধ এল হাতে টাকার থলি।
করলে বিবেচনা, বললে,
“কিনব দিয়ে সোনা।”
উজাড় করে দিয়ে থলি করলে আনাগোনা।
বোঝা মাথায় নিয়ে কোথায় গেলেম অন্যমনা।
সন্ধ্যাবেলায় জ্যোৎস্না নামে মুকুল-ভরা গাছে।
সুন্দরী সে বেরিয়ে এল বকুলতলার কাছে।
বললে কাছে এসে, “তোমায়
কিনব আমি হেসে।”
হাসিখানি চোখের জলে মিলিয়ে এল শেষে;
ধীরে ধীরে ফিরে গেল বনছায়ার দেশে।
সাগরতীরে রোদ পড়েছে ঢেউ দিয়েছে জলে,
ঝিনুক নিয়ে খেলে শিশু বালুতটের তলে।