Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


পরিশেষ - মুক্তি, ১
মুক্তি
১

আমারে সাহস দাও, দাও শক্তি, হে চিরসুন্দর,

দাও স্বচ্ছ তৃপ্তির আকাশ, দাও মুক্তি নিরন্তর

প্রত্যহের ধূলিলিপ্ত চরণপতনপীড়া হতে,

দিয়ো না দুলিতে মোরে তরঙ্গিত মুহূর্তের স্রোতে,

ক্ষোভের বিক্ষেপবেগে। শ্রাবণসন্ধ্যার পুষ্পবনে

গ্লানিহীন যে সাহস সুকুমার যূথীর জীবনে —

নির্মম বর্ষণঘাতে শঙ্কাশূন্য প্রসন্ন মধুর,

মুহূর্তের প্রাণটিতে ভরি তোলে অনন্তের সুর,

সরল আনন্দহাস্যে ঝরি পড়ে তৃণশয্যা -' পরে,

পূর্ণতার মূর্তিখানি আপনার বিনম্র অন্তরে

সুগন্ধে রচিয়া তোলে ; দাও সেই অক্ষুব্ধ সাহস,

সে আত্মবিস্মৃত শক্তি, অব্যাকুল, সহজে স্ববশ

আপনার সুন্দর সীমায় — দ্বিধাশূন্য সরলতা

গাঁথুক শান্তির ছন্দে সব চিন্তা, মোর সব কথা।


২

আপনার কাছ হতে বহুদূরে পালাবার লাগি

হে সুন্দর, হে অলক্ষ্য, তোমার প্রসাদ আমি মাগি,

তোমার আহ্বানবাণী। আজ তব বাজুক বাঁশরি,

চিত্তভরা শ্রাবণপ্লাবনরাগে — যেন গো পাসরি

নিকটের তাপতপ্ত ঘূর্ণিবায়ে ক্ষুব্ধ কোলাহল,

ধূলির নিবিড় টান পদতলে। রয়েছি নিশ্চল

সারাদিন পথপার্শ্বে ; বেলা হয়ে এল অবসান,

ঘন হয়ে আসে ছায়া, শ্রান্ত সূর্য করিছে সন্ধান

দিগন্তে অন্তিম শান্তি। দিবা যথা চলেছে নির্ভীক

চিহ্নহীন সঙ্গহীন অন্ধকার পথের পথিক

আপনার কাছ হতে অন্তহীন অজানার পানে

অসীমের সংগীতে উদাসী — সেইমতো আত্মদানে

আমারে বাহির করো, শূন্যে শূন্যে পূর্ণ হোক সুর,

নিয়ে যাক পথে পথে হে অলক্ষ্য, হে মহাসুদূর।