Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


উলুখড়ের বিপদ - ২
উলুখড়ের বিপদ
ভট্টাচার্য খবর পাইলেন, আপিলে তাঁহার হার হইয়াছে।

ভট্টাচার্য মাথা চাপড়াইয়া উকিলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "বসন্তবাবু, করিলেন কী। আমার কী দশা হইবে।"

দিন যে কেমন করিয়া রাত হইল, বসন্তবাবু তাহার নিগুঢ় বৃত্তান্ত বলিলেন, “সম্প্রতি যিনি নূতন অ্যাডিশনাল জজ হইয়া আসিয়াছেন তিনি মুন্সেফ থাকা কালে মুন্সেফ নবগোপালবাবুর সহিত তাঁহার ভারি খিটিমিটি বাধিয়াছিল। তখন কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই; আজ জজের আসনে বসিয়া নবগোপালবাবুর রায় পাইবামাত্র উলটাইয়া দিতেছেন; আপনি হারিলেন সেইজন্য।” ব্যাকুল হরিহর কহিলেন, “হাইকোর্টে ইহার কোনো আপিল নাই? ” বসন্ত কহিলেন, “জজবাবু আপিলে ফল পাইবার সম্ভাবনা মাত্র রাখেন নাই। তিনি আপনাদের সাক্ষীকে সন্দেহ করিয়া বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষীকেই বিশ্বাস করিয়া গিয়াছেন। হাইকোর্টে তো সাক্ষীর বিচার হইবে না।”

বৃদ্ধ সাশ্রুনেত্রে কহিলেন, “তবে আমার উপায়? ”

উকিল কহিলেন, “উপায় কিছুই দেখি না।”

গিরিশ বসু পরদিন লোকজন সঙ্গে লইয়া ঘটা করিয়া ব্রাক্ষ্মণের পদধূলি লইয়া গেল এবং বিদায়কালে উচ্ছ্বসিত দীর্ঘনিশ্বাসে কহিল, “প্রভু, তোমারই ইচ্ছা।”