Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


কল্পনা - বঙ্গলক্ষ্মী, ১
বঙ্গলক্ষ্মী

তোমার মাঠের মাঝে, তব নদীতীরে,

তব আম্রবনে-ঘেরা সহস্র কুটিরে,

দোহনমুখর গোষ্ঠে, ছায়াবটমূলে,

গঙ্গার পাষাণঘাটে দ্বাদশ দেউলে,

হে নিত্যকল্যাণী লক্ষ্মী, হে বঙ্গজননী,

আপন অজস্র কাজ করিছ আপনি

অহর্নিশি হাস্যমুখে।

 

                      এ বিশ্বসমাজে

তোমার পুত্রের হাত নাহি কোনো কাজে,

নাহি জান সে বারতা। তুমি শুধু, মা গো,

নিদ্রিত শিয়রে তার নিশিদিন জাগ

মলয় বীজন করি। রয়েছ, মা, ভুলি

তোমার শ্রীঅঙ্গ হতে একে একে খুলি

সৌভাগ্যভূষণ তব, হাতের কঙ্কণ,

তোমার ললাটশোভা সীমন্তরতন,

তোমার গৌরব, তারা বাঁধা রাখিয়াছে

বহুদূর বিদেশের বণিকের কাছে।

 

নিত্যকর্মে রত শুধু, অয়ি মাতৃভূমি,

প্রত্যুষে পূজার ফুল ফুটাইছ তুমি,

মধ্যাহ্নে পল্লবাঞ্চল প্রসারিয়া ধরি

রৌদ্র নিবারিছ, যবে আসে বিভাবরী

চারি দিক হতে তব যত নদনদী

ঘুম পাড়াবার গান গাহে নিরবধি

ঘেরি ক্লান্ত গ্রামগুলি শত বাহুপাশে।

শরৎ-মধ্যাহ্নে আজি স্বল্প অবকাশে

ক্ষণিক বিরাম দিয়া পুণ্য গৃহকাজে

হিল্লোলিত হৈমন্তিক মঞ্জরীর মাঝে

কপোতকূজনাকুল নিস্তব্ধ প্রহরে