একদিন শিখগুরু গোবিন্দ নির্জনে
একাকী ভাবিতেছিলা আপনার মনে
আপন জীবনকথা ; সে সংকল্পলেখা
অখণ্ড সম্পূর্ণরূপে দিয়েছিল দেখা
যৌবনের স্বর্ণপটে, যে আশা একদা
ভারত গ্রাসিয়াছিল, সে আজি শতধা,
সে আজি সংকীর্ণ শীর্ণ সংশয়সংকুল,
সে আজি সংকটমগ্ন। তবে একি ভুল!
তবে কি জীবন ব্যর্থ! দারুণ দ্বিধায়
শ্রান্তদেহে ক্ষুব্ধচিত্তে আঁধার সন্ধ্যায়
গোবিন্দ ভাবিতেছিল ; হেনকালে এসে
পাঠান কহিল তাঁরে, ‘ যাব চলি দেশে,
ঘোড়া - যে কিনেছ তুমি দাও তার দাম।'
কহিল গোবিন্দ গুরু, ‘ শেখজি, সেলাম,
মূল্য কালি পাবে, আজি ফিরে যাও ভাই।'
পাঠান কহিল রোষে, ‘ মূল্য আজই চাই।'
এত বলি জোর করি ধরি তাঁর হাত —
চোর বলি দিল গালি। শুনি অকস্মাৎ
গোবিন্দ বিজুলি - বেগে খুলি নিল অসি,
পলকে সে পাঠানের মুণ্ড গেল খসি ;
রক্তে ভেসে গেল ভূমি। হেরি নিজকাজ
মাথা নাড়ি কহে গুরু, ‘ বুঝিলাম আজ
আমার সময় গেছে। পাপ তরবার
লঙ্ঘন করিল আজি লক্ষ্য আপনার
নিরর্থক রক্তপাতে। এ বাহুর'পরে
বিশ্বাস ঘুচিয়া গেল চিরকালতরে।
ধুয়ে মুছে যেতে হবে এ পাপ, এ লাজ —
আজ হতে জীবনের এই শেষ কাজ।'