Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
মানসী - সিন্ধুতরঙ্গ, ৩
মানসী
সিন্ধু মেলে গ্রাস।
নাই তুমি, ভগবান, নাই দয়া, নাই প্রাণ—
জড়ের বিলাস। ভয় দেখে ভয় পায়, শিশু কাঁদে উভরায়—
নিদারুণ হায়-হায় থামিল চকিতে।
নিমেষেই ফুরাইল, কখন জীবন ছিল
কখন জীবন গেল নারিল লখিতে।
যেন রে একই ঝড়ে নিবে গেল একত্তরে
শত দীপ আলো,
চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো।
না জানে আপন।
এর মাঝে কেন রয় ব্যথাভরা স্নেহময়
মানবের মন।
মা কেন রে এইখানে, শিশু চায় তার পানে,
ভাই সে ভায়ের টানে কেন পড়ে বুকে।
মধুর রবির করে কত ভালোবাসা-ভরে
কতদিন খেলা করে কত সুখে দুখে।
কেন করে টলমল দুটি ছোটো অশ্রুজল,
সকরুণ আশা।
দীপশিখাসম কাঁপে ভীত ভালোবাসা।
নিখিল মানব।
সব সুখ সব আশ কেন নাহি করে গ্রাস
মরণ দানব।
ওই-যে জন্মের তরে জননী ঝাঁপায়ে পড়ে
কেন বাঁধে বক্ষ-’পরে সন্তান আপন।
মরণের মুখে ধায়, সেথাও দিবে না তায়—
কাড়িয়া রাখিতে চায় হৃদয়ের ধন।
নাই তুমি, ভগবান, নাই দয়া, নাই প্রাণ—
জড়ের বিলাস। ভয় দেখে ভয় পায়, শিশু কাঁদে উভরায়—
নিদারুণ হায়-হায় থামিল চকিতে।
নিমেষেই ফুরাইল, কখন জীবন ছিল
কখন জীবন গেল নারিল লখিতে।
যেন রে একই ঝড়ে নিবে গেল একত্তরে
শত দীপ আলো,
চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো।
প্রাণহীন এ মত্ততা না জানে পরের ব্যথা,
না জানে আপন।
এর মাঝে কেন রয় ব্যথাভরা স্নেহময়
মানবের মন।
মা কেন রে এইখানে, শিশু চায় তার পানে,
ভাই সে ভায়ের টানে কেন পড়ে বুকে।
মধুর রবির করে কত ভালোবাসা-ভরে
কতদিন খেলা করে কত সুখে দুখে।
কেন করে টলমল দুটি ছোটো অশ্রুজল,
সকরুণ আশা।
দীপশিখাসম কাঁপে ভীত ভালোবাসা।
এমন জড়ের কোলে কেমনে নির্ভয়ে দোলে
নিখিল মানব।
সব সুখ সব আশ কেন নাহি করে গ্রাস
মরণ দানব।
ওই-যে জন্মের তরে জননী ঝাঁপায়ে পড়ে
কেন বাঁধে বক্ষ-’পরে সন্তান আপন।
মরণের মুখে ধায়, সেথাও দিবে না তায়—
কাড়িয়া রাখিতে চায় হৃদয়ের ধন।