নিজেকে যথাসাধ্য শোধন করে নিয়ে ঊর্মি অতি ধীরে লেফাফাটা খুললে।
চিঠিখানা পড়ে হঠাৎ লাফিয়ে উঠল। ইচ্ছা করল নাচতে, কিন্তু নাচ ওর অভ্যাস নেই। সেতারটা ছিল বিছানার উপর, সেটা তুলে নিয়ে সুর না বেঁধেই ঝনাঝন ঝংকার দিয়ে যা-তা বাজাতে লাগল।
ঠিক এমন সময়ে শশাঙ্ক ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলে, “ব্যাপারখানা কী। বিয়ের দিন স্থির হয়ে গেল বুঝি?”
“হাঁ শশাঙ্কদা, স্থির হয়ে গেছে।”
“কিছুতেই নড়চড় হবে না?”
“কিছুতেই না।”
“তা হলে এইবেলা সানাই বায়না দিই, আর ভীমনাগের সন্দেশ?”
“তোমাকে কোনো চেষ্টা করতে হবে না।”
“নিজেই সব করবে? ধন্য বীরাঙ্গনা। আর, কনেকে আশীর্বাদ?”
“সে আশীর্বাদের টাকাটা আমার নিজের পকেট থেকেই গেছে।”
“মাছের তেলেই মাছভাজা? ভালো বোঝা গেল না।”
“এই নাও, বুঝে দেখো।”
বলে চিঠিখানা ওর হাতে দিলে।
পড়ে শশাঙ্ক হো হো করে হেসে উঠল।
লিখছে : যে রিসার্চের দুরূহ কাজে নীরদ আত্মনিবেদন করতে চায় ভারতবর্ষে তা সম্ভব নয়। সেইজন্যেই ওর জীবনে আর-একটা মস্ত স্যাক্রিফাইস মেনে নিতে হল। ঊর্মির সঙ্গে বিবাহের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন না করলে উপায় নেই। একজন য়ুরোপীয় মহিলা ওকে বিবাহ করে ওর কাজে আত্মদান করতে সম্মত। কিন্তু কাজটা সেই একই, ভারতবর্ষেই করা হোক আর এখানেই। রাজারামবাবু যে কাজের জন্য অর্থ দিতে চেয়েছিলেন তার কিয়দংশ সেখানে নিযুক্ত করলে অন্যায় হবে না। তাতে মৃতব্যক্তির ‘পরে সম্মান করাই হবে।
শশাঙ্ক বললে, “জীবিত ব্যক্তিটাকে কিছু কিছু দিয়ে যদি সেই দূরদেশেই দীর্ঘকাল জিইয়ে রাখতে পার তো মন্দ হয় না। টাকা বন্ধ করলে পাছে খিদের জ্বালায় মরিয়া হয়ে এখানে দৌড়ে আসে এই ভয় আছে।”
ঊর্মি হেসে বললে, “সে ভয় যদি তোমার মনে থাকে টাকা তুমিই দিয়ো, আমি এক পয়সাও দেব না।”
শশাঙ্ক বললে, “আবার তো মন বদল হবে না? মানিনীর অভিমান তো অটল থাকবে?”
“বদল হলে তোমার তাতে কী শশাঙ্কদা!”
“প্রশ্নের সত্য উত্তর দিলে অহংকার বেড়ে যাবে, অতএব তোমার হিতের জন্যে চুপ করে রইলুম। কিন্তু ভাবছি, লোকটার