Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


চিত্রা - নগরসংগীত, ৪
চিত্রা

পরমুখ হতে করিয়া ভ্রংশ

    তুলিব আপন কবলে।

মনেতে জানিব সকল পৃথ্বী

আমারি চরণ-আসনভিত্তি,

রাজার রাজ্য দস্যুবৃত্তি

    কোনো ভেদ নাহি উভয়ে।

ধনসম্পদ করিব নস্য,

লুণ্ঠন করি আনিব শস্য,

অশ্বমেধের মুক্ত অশ্ব

    ছুটাব বিশ্বে অভয়ে।

নব নব ক্ষুধা, নূতন তৃষ্ণা,

নিত্যনূতন কর্মনিষ্ঠা,

জীবনগ্রন্থে নূতন পৃষ্ঠা

    উলটিয়া যাব ত্বরিতে।

জটিল কুটিল চলেছে পন্থ

নাহি তার আদি নাহিকো অন্ত,

উদ্দামবেগে ধাই তুরন্ত

    সিন্ধু-শৈল-সরিতে।

শুধু সম্মুখে চলেছি লক্ষি

আমি নীড়হারা নিশার পক্ষী,

তুমিও ছুটিছ চপলা লক্ষ্মী,

    আলেয়া-হাস্যে ধাঁধিয়া।

পূজা দিয়া পদে করি না ভিক্ষা,

বসিয়া করি না তব প্রতীক্ষা,

কে কারে জিনিবে হবে পরীক্ষা —

    আনিব তোমারে বাঁধিয়া।

মানবজন্ম নহে তো নিত্য,

ধনজনমান খ্যাতি ও বিত্ত

নহে তারা কারো অধীন ভৃত্য —

    কাল-নদী ধায় অধীরা।

তবে দাও ঢালি — কেবলমাত্র

দু-চারি দিবস, দু-চারি রাত্র,

পূর্ণ করিয়া জীবনপাত্র

         জনসংঘাতমদিরা।