রসিক। সে কথা মানতেই হয়– অভিসারটা মনে মনেই ভালো, গাড়ি-ঘোড়ার রাস্তায় অত্যন্ত বেমানান। আশীর্বাদ করি শ্রীশবাবু, এইরকম বসন্তের জ্যোৎস্নারাত্রে কোনো-একটি জানলা থেকে কোনো-এক রমণীর ব্যাকুল হৃদয় তোমার বাসার দিকে যেন অভিসারে যাত্রা করে।
শ্রীশ। তা করবে রসিকবাবু, আপনার আশীর্বাদ ফলবে। আজকের হাওয়াতে সেই খবরটা আমি মনে মনে পাচ্ছি। বিশে ডাকাত যেমন খবর দিয়ে ডাকাতি করত, আমার অজানা অভিসারিকা তেমনি পূর্বে হতেই আমাকে অভিসারের খবর পাঠিয়েছে।
বিপিন। তোমার সেই ছাতের বারান্দাটা সাজিয়ে প্রস্তুত হয়ে থেকো।
শ্রীশ। তা, আমার সেই দক্ষিণের বারান্দায় একটি চৌকিতে আমি বসি, আর-একটি চৌকি সাজানো থাকে।
বিপিন। সেটাতে আমি এসে বসি।
শ্রীশ। মধ্বভাবে গুড়ং দদ্যাৎ, অভাবপক্ষে তোমাকে নিয়ে চলে।
বিপিন। মধুময়ী যখন আসবেন তখন হতভাগার ভাগ্যে লগুড়ং দদ্যাৎ।
রসিক। (জনান্তিকে) শ্রীশবাবু, আপনার সেই দক্ষিণের ছাতটিকে চিহ্নিত করে রাখবার জন্যে যে পতাকা ওড়ানো আবশ্যক সেটা যে ফেলে এলেন!
শ্রীশ। রুমালটা কি এখন চেষ্টা করলে পাওয়া যেতে পারবে?
রসিক। চেষ্টা করতে দোষ কী?
শ্রীশ। বিপিন, তুমি ভাই রসিকবাবুর সঙ্গে একটু কথাবার্তা কও, আমি চট্ করে আসছি।
বিপিন। আচ্ছা রসিকবাবু, রাগ করবেন না।
রসিক। যদি বা করি, আপনার ভয় করবার কোনো কারণ নেই– আমি ভারি দুর্বল।
বিপিন। দুই-একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব, আপনি বিরক্ত হবেন না।
রসিক। আমার বয়স সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন নয় তো?
বিপিন। না।
রসিক। তবে জিজ্ঞাসা করুন, ঠিক উত্তর পাবেন।
বিপিন। সেদিন যে মহিলাটিকে দেখলাম, তিনি–
রসিক। তিনি আলোচনার যোগ্য, আপনি সংকোচ করবেন না বিপিনবাবু– তাঁর সম্বন্ধে যদি আপনি মাঝে মাঝে চিন্তা ও চর্চা করে থাকেন তবে তাতে আপনার অসাধারণত্ব প্রমাণ হয় না, আমরাও ঠিক ঐ কাজ করে থাকি।
বিপিন। অবলাকান্তবাবু বুঝি–
রসিক। তাঁর কথা বলবেন না– তাঁর মুখে অন্য কথা নেই।
বিপিন। তিনি কি–
রসিক। হাঁ, তাই বটে। তবে হয়েছে কী, তিনি নৃপবালা নীরবালা দুজনের কাকে যে বেশি ভালোবাসেন স্থির করে উঠতে পারেন না– তিনি দুজনের মধ্যে সর্বদাই দোলায়মান।
বিপিন। কিন্তু তাঁদের কেউ ওঁর প্রতি–