Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


সফলতার দৃষ্টান্ত- ২
সফলতার দৃষ্টান্ত

জগা তো চলিয়া গেল। কিন্তু আমি আর অশ্রু সংবরণ করিতে পারিলাম না। তোড়াটি হৃদয়ে চাপিয়া ধরিলাম, দুটি-একটি কণ্টক বক্ষে বিঁধিল— বুকের রক্তের সহিত ফুলের শিশির এবং ফুলের শিশিরের সঙ্গে আমার চোখের জল মিশিল। হরি হরি, সেই অবধি আমার এ কী হইল। কী যেন-আমাকে কী করিল! কে যেন আমাকে কী বলিয়া গেল! কোথায় যেন আমার কাহার সহিত দেখা হইয়াছিল! কখন যেন তাহাকে হারাইয়াছি। কেবল যেন এই তোড়াটি— এই কয়েকটি ক্রোটনের পাতা, এই শ্বেত গোলাপ এবং এই গুটিকতক দোপাটি— আমার কাছে চিরজীপনের মতো কী-যেন-কী হইয়া রহিল এবং এখন হইতে যখনই জগা মালীকে দেখি তাহার মুখে যেন কী-যেন-কী দেখিতে পাই এবং সেও আমার ভাবগতিক দেখিয়া অবাক হইয়া আমারও মুখে যেন কী- যেন-কী দেখিতে পায়! জগতের লোকে সকলে জানে যে আমার জগা মালী আমাকে বাগান হইতে ফুল তুলিয়া তোড়া বাঁধিয়া দেয়, কেবল আমার অন্তর জানে, আমাকে কে যেন গোপনে তোড়া পাঠাইয়া দেয়।