কেদার। যা, যা, মেলা বকিস নে। এখন এ আমার আত্মীয়বাড়ি তা জানিস?
তিনকড়ি। সমস্তই জানি, আমার অগোচর কিছুই নেই। কিন্তু বুড়ো বৈকুণ্ঠকে দেখছি নে যে। তাকে বুঝি ঠেলে দিয়েছিস? ঐটে তোর দোষ। কাজ ফুরোলেই—
কেদার। তিনকড়ে! ফের! কানমলা খাবি।
তিনকড়ি। তা, দে মলে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে হয়, বৈকুণ্ঠকে যদি তুই ফাঁকি দিস তা হলে অধর্ম হবে, আমার সঙ্গে যা করিস সে আলাদা—
কেদার। ইস, এত ধর্ম শিখে এলি কোথা।
তিনকড়ি। তা, যা বলিস ভাই, যদিচ তুমি-আমি এতদিন টিকে আছি তবু ধর্ম বলে একটা কিছু আছে। দেখো কেদারদা, আমি যখন হাঁসপাতালে পড়ে ছিলুম, বুড়োর কথা আমার সর্বদা মনে হত। পড়ে পড়ে ভাবতুম, তিনকড়ি নেই, এখন কেদারদার হাত থেকে বুড়োকে কে ঠেকাবে। বড়ো দুঃখ হত।
কেদার। দেখ্ তিনকড়ে, তুই যদি এখানে আমাকে জ্বালাতে আসিস তা হলে—
তিনকড়ি। মিথ্যে ভয় করছ দাদা। আমাকে আর হাঁসপাতালে পাঠাতে হবে না। এখানে তুমি একলাই রাজত্ব করবে। আমি দুদিনের বেশি কোথাও টিকতে পারি নে, এ জায়গাও আমার সহ্য হবে না।
কেদার। তা হলে আর আমাকে দগ্ধাস কেন, নাহয় দুটো দিন আগেই গেলি।
তিনকড়ি। বৈকুণ্ঠের খাতাখানা না চুকিয়ে যেতে পারছি নে, তুমি তাকে ফাঁকি দেবে জানি। অদৃষ্টে যা থাকে ওটা এই অভাগাকেই শুনতে হবে।
কেদার। এ ছোঁড়াটাকে মেরে ধরে, গাল দিয়ে, কিছুতেই তাড়াবার জো নেই। তিনকড়ে, তোর খিদে পেয়েছে?
তিনকড়ি। কেন আর মনে করিয়ে দাও ভাই?
কেদার। চল্, তোকে কিছু পয়সা দিই গে, বাজার থেকে জলখাবার কিনে এনে খাবি।
তিনকড়ি। এ কী হল! তোমারও ধর্মজ্ঞান! হঠাৎ, ভালোমন্দ একটা কিছু হবে না তো।
বৈকুণ্ঠ। ভেবেছিলুম, খাতাপত্রগুলো আর সঙ্গে নেব না—শুনে নীরুমা কাঁদতে লাগল, ভাবলে বুড়ো বয়সের খেলাগুলো বাবা কোথায় ফেলে যাচ্ছে। এগুলো নে ঈশেন।—ঈশেন!
ঈশান। কী বাবু!
বৈকুণ্ঠ। ছোটোর উপর বড়োর যেরকম স্নেহ, বড়োর উপর ছোটোর সেরকম হয় না—না ঈশেন?
ঈশান। তাই তো দেখতে পাই।
বৈকুণ্ঠ। আমি চলে গেলে অবু বোধ হয় বিশেষ কষ্ট পাবে না।
ঈশান। না পাবারই সম্ভব। বিশেষ—
বৈকুণ্ঠ। হাঁ, বিশেষ তার নতুন সংসার হয়েছে, আর তো আত্মীয়স্বজনের অভাব নেই, কী বলিস ঈশেন—