বিপিন। সে তো আমার আসে না, আমি বই বাজাই। দেখুন বৈকুণ্ঠবাবু, আপনাকে রোজ বলব মনে করি, ভুলে যাই—আপনার এই ডেক্সো আর ঐ গোটাকতক শেলফ্ এখান থেকে সরাতে হচ্ছে, আমার বন্ধুরা সর্বদাই আসছে, তাদের বসাবার জায়গা পাচ্ছি নে—
বৈকুণ্ঠ। আর তো ঘর দেখি নে—দক্ষিণের ঘরে কেদারবাবু আছেন, ডাক্তার তাঁকে বিশ্রাম করতে বলেছে—পুবের ঘরটায় কে কে আছেন আমি ঠিক চিনি নে—তা বেণীবাবু—
বিপিন। বিপিনবাবু—
বৈকুন্ঠ। হাঁ হাঁ, বিপিনবাবু—তা, যদি ওগুলো এক পাশে সরিয়ে রাখি তা হলে কি কিছু অসুবিধে হয়?
বিপিন। অসুবিধা আর কী, থাকবার কষ্ট হয়। আমি আবার বেশ একটু ফাঁকা না হলে থাকতে পারি নে। ‘ভাবতে পারি নে পরের ভাবনা লো সই!’
বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, এ ঘরে বেণীবাবুর—
বিপিন। বিপিনবাবুর—
বৈকুণ্ঠ। হাঁ, বিপিনবাবুর থাকার কিছু কষ্ট হচ্ছে।
ঈশান। কষ্ট হয়ে থাকে তো আর আবশ্যক কী, ওঁর বাপের ঘরদুয়োর কিছু নেই নাকি!
বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, চুপ কর্।
বিপিন। কী রাস্কেল, তুই এতবড়ো কথা বলিস!
ঈশান। দেখো, গালমন্দ দিয়ো না বলছি—
বৈকুণ্ঠ। আঃ ঈশেন, থাম্—
বিপিন। আমি তোদের এ ঘরে পায়ের ধুলো মুছতে চাই নে, আমি এখনই চললুম।
বৈকুণ্ঠ। যাবেন না বেণীবাবু, আমি গলবস্ত্র হয়ে বলছি মাপ করবেন—(বৈকুণ্ঠকে ঠেলিয়া বিপিনের প্রস্থান) ঈশেন, তুই কী করলি বল্ দেখি—তুই আর আমাকে বাড়িতে টিকতে দিলি নে দেখছি।
ঈশান। আমিই দিলুম না বটে!
বৈকুণ্ঠ। দেখ্ ঈশেন, অনেক কাল থেকে আছিস, তোর কথাবার্তাগুলো আমাদের অভ্যাস হয়ে এসেছে, এরা নতুন মানুষ—এরা সইতে পারবে কেন? তুই একটু ঠাণ্ডা হয়ে কথা কইতে পারিস নে?
ঈশান। আমি ঠাণ্ডা থাকি কী করে! এদের রকম দেখে আমার সর্বশরীর জ্বলতে থাকে।
বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, ওরা আমাদের নতুন কুটুম্ব, ওরা কিছুতে ক্ষুণ্ন হলে অবিনাশের গায়ে লাগবে, সে আমাকেও কিছু বলতে পারবে না, অথচ তার হল—
ঈশান। সে তো সব বুঝেছি। সেইজন্যেই তো ছোটো বয়সে ছোটোবাবুকে বিয়ে দেবার জন্যে কতবার বলেছি। সময়কালে বিয়ে হলে এতটা বাড়াবাড়ি হয় না।
বৈকুণ্ঠ। যা, আর বকিস নে ঈশেন, এখন যা, আমি সকল কথা একবার ভেবে দেখি।
ঈশান। ভেবে দেখো! এখন যে কথাটা বলতে এসেছিলুম বলে নিই। আমাদের ছোটোমার খুড়ি না পিসি না কে এক বুড়ি