মাধব দত্ত। মুশকিলে পড়ে গেছি। যখন ও ছিল না, তখন ছিলই না– কোনো ভাবনাই ছিল না। এখন ও কোথা থেকে এসে আমার ঘর জুড়ে বসল; ও চলে গেলে আমার এ ঘর যেন আর ঘরই থাকবে না। কবিরাজমশায়, আপনি কি মনে করেন ওকে–
কবিরাজ। ওর ভাগ্যে যদি আয়ু থাকে, তা হলে দীর্ঘকাল বাঁচতেও পারে; কিন্তু আয়ুর্বেদে যেরকম লিখছে তাতে তো –
মাধব দত্ত। বলেন কী!
কবিরাজ। শাস্ত্র বলছেন, পৈত্তিকান্ সন্নিপাতজান্ কফবাতসমুদ্ভবান্—
মাধব দত্ত। থাক্ থাক্, আপনি আর ঐ শ্লোকগুলো আওড়াবেন না —ওতে আরো আমার ভয় বেড়ে যায়। এখন কী করতে হবে সেইটে বলে দিন।
কবিরাজ। (নস্য লইয়া) খুব সাবধানে রাখতে হবে।
মাধব দত্ত। সে তো ঠিক কথা, কিন্তু কী বিষয়ে সাবধান হতে হবে সেইটে স্থির করে দিয়ে যান।
কবিরাজ। আমি তো পূর্বেই বলেছি, ওকে বাইরে একেবারে যেতে দিতে পারবেন না।
মাধব দত্ত। ছেলেমানুষ, ওকে দিনরাত ঘরের মধ্যে ধরে রাখা যে ভারি শক্ত।
কবিরাজ। তা কী করবেন বলেন। এই শরৎকালের রৌদ্র আর বায়ু দুই-ই ঐ বালকের পক্ষে বিষবৎ— কারণ কিনা শাস্ত্রে বলছে, অপস্মারে জ্বরে কাশে কামলায়াং হলীমকে—
মাধব দত্ত। থাক্ থাক্, আপনার শাস্ত্র থাক্। তা হলে ওকে বন্ধ করেই রেখে দিতে হবে —অন্য কোনো উপায় নেই?
কবিরাজ। কিছু না, কারণ, পবনে তপনে চৈব –
মাধব দত্ত। আপনার ও চৈব নিয়ে আমার কী হবে বলেন তো। ও থাক্-না —কী করতে হবে সেইটে বলে
দিন। কিন্তু আপনার ব্যবস্থা বড়ো কঠোর। রোগের সমস্ত দুঃখ ও-বেচারা চুপ করে সহ্য করে —কিন্তু আপনার ওষুধ খাবার সময় ওর কষ্ট দেখে আমার বুক ফেটে যায়।
কবিরাজ। সেই কষ্ট যত প্রবল তার ফলও তত বেশি —তাই তো মহর্ষি চ্যবন বলেছেন, ভেষজং হিতবাক্যঞ্চ তিক্তং আশুফলপ্রদং। আজ তবে উঠি দত্তমশায়!
[ প্রস্থান
মাধব দত্ত। ঐ রে ঠাকুরদা এসেছে! সর্বনাশ করলে!
ঠাকুরদা। কেন? আমাকে তোমার ভয় কিসের?
মাধব দত্ত। তুমি যে ছেলে খেপাবার সদ্দার।
ঠাকুরদা। তুমি তো ছেলেও নও, তোমার ঘরেও ছেলে নেই —তোমার খেপবার বয়সও গেছে —তোমার ভাবনা কী।
মাধব দত্ত। ঘরে যে ছেলে একটি এনেছি।