কেদার। (স্বগত) আর তো বাঁচি নে!
অবিনাশ। (চিঠি ঢাকিয়া) দাদা, কেদারবাবুর সঙ্গে একটা কাজের কথা ছিল।
বৈকুণ্ঠ। কাজের তো সীমা নেই! ছোঁড়াটার মাথা একেবারে ঘুরে গেছে।—কিন্তু কেদারবাবুকে না পেলে তো আমার চলছে না।
ভৃত্য। বাবু, মানিকতলা থেকে মালী এসেছে।
অবিনাশ। এখন যেতে বলে দে!
বৈকুণ্ঠ। যাও-না, একবার শুনেই এসো-না! ততক্ষণ আমি কেদারবাবুর কাছে আছি—
কেদার। আমার জন্যে ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, আমি আজ তবে—
অবিনাশ। না কেদার, একটু বোসো।
বৈকুণ্ঠ। না, না, আপনি বসুন। দেখো অবিনাশ, গাছপালা সম্বন্ধে তোমার যে আলোচনাটা ছিল সেটা অবহেলা কোরো না। সেটা বড়ো স্বাস্থ্যকর, বড়োই আনন্দজনক।
অবিনাশ। কিছু অবহেলা করব না দাদা, কিন্তু এখন একটা বড়ো দরকারি কাজ আছে।
বৈকুণ্ঠ। আচ্ছা, তা হলে তোমরা একটু বোসো।— ভালোমানুষ পেয়ে বেচারা কেদারবাবুকে ভারি মুশকিলে ফেলেছে—একটু বিবেচনা নেই—বয়সের ধর্ম!
কেদার। আবার এখানে কী করতে এলি?
তিনকড়ি। ভয় কী দাদা, দু জন আছে—একটিকে তুমি নাও, একটি আমাকে দাও।
বৈকুণ্ঠ। বেশ কথা বাবা, এসো, আমার ঘরে এসো।
কেদার। তিনকড়ে, তুই আমাকে মাটি করলি!
তিনকড়ি। সব্বাই বলে তুমিই আমাকে মাটি করেছ। (কাছে গিয়া) রাগ কর কেন দাদা, যে অবধি তোমাকে দেখেছি সেই অবধি আপন বাপ দাদা খুড়ো কাউকে দু চক্ষে দেখতে পারি নে। এত ভালোবাসা।
কেদার। বাজে বকিস কেন, তোর আবার বাপ দাদা কোথা!
তিনকড়ি। বললে বিশ্বাস করবি নে, কিন্তু আছে ভাই। ওতে তো খরচও নেই, মাহাত্মিও নেই—তিনকড়েরও বাপ দাদা থাকে, যদি আমার নিজে করে নিতে হত তবে কি আর থাকত? কক্খনো না!
বৈকুণ্ঠ। হা হা হা হাঃ! ছেলেটি বেশ কথা কয়। চলো বাবা, আমার ঘরে চলো।
অবিনাশ। খুব সংক্ষেপে লিখলুম, বুঝেছ কেদার—কেবল একটি লাইন—‘দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার’।