কেদার। দায় বলে দায়! শুনলুম দেশে তার তিন শ্যালী আছে, তিনটিকেই এক কুলীন চীনেম্যানের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। কন্যাদায় দায়, কিন্তু, কী বলে ভালো, শ্যালীদায়ের সঙ্গে তার তুলনাই হয় না।
বৈকুণ্ঠ। (হাসিয়া) বল কী কেদারবাবু!
কেদার। সাধে বলি! ভুক্তভোগীর কথা। ওর নাম কী, শ্বশুরবাড়িতে শ্যালী অতি উত্তম জিনিস—অমন জিনিস আর হয় না—কিন্তু সেখান থেকে চ্যুত হয়ে হঠাৎ স্কন্ধের উপর এসে পড়লে, ওর নাম কী, সকলে সামলাতে পারে না।
বৈকুন্ঠ। সামলাতে পারে না! হা হা, হা হা!
কেদার। আজ্ঞে, আমি তো পারছি নে। একে শ্যালী তাতে নিখুঁত সুন্দরী, তাতে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছেন, ওর নাম কী, ঘরে তো আর টেকা যায় না! চোখ মেলে চাইলে স্ত্রী ভাবে শ্যালীকে খুঁজছি, ওর নাম কী, চোখ বুজে থাকলে স্ত্রী ভাবে আমি শ্যালীর ধ্যান করছি। কাসলে মনে করে কাসির মধ্যে একটি অর্থ আছে, আবার কী বলে ভালো, প্রাণপণে কাসি চেপে থাকলে মনে করে তার অর্থ আরো সন্দেহজনক।
অবিনাশ। কী দাদা, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল, এখনো লেখা নিয়ে বসে আছ!
বৈকুণ্ঠ। না, না, লেখাটেখা কিছু নয়, কেদারবাবুর সঙ্গে গল্প করছি।
অবিনাশ। তাই তো, কেদার দেখছি! কী সর্বনাশ! তুমি কোথা থেকে হে। দাদাকে পেয়ে বসেছ বুঝি।
কেদার। হা হা হা হাঃ! অবিনাশ, চিরকালই তুমি ছেলেমানুষ রয়ে গেলে হে।
অবিনাশ। দাদা, তোমার লেখা শোনাবার আর লোক পেলে না? শেষকালে কেদারকে ধরেছ? ও যে তোমাকে ধরলে আর ছাড়বে না।
বৈকুণ্ঠ। আঃ অবিনাশ, ছিঃ, কী বকছ?
কেদার। বৈকুণ্ঠবাবু, আপনি ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, অবিনাশের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়েছি, আমার সঙ্গে দেখা হলেই ওর আর ঠাট্টা ছাড়া কথা নেই।
অবিনাশ। তোমার ঠাট্টা যে আমার ঠাট্টার চেয়ে গুরুতর। এই সেদিন আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেলে, আবার বুঝি দরকার পড়েছে তাই দাদার বই শুনতে এসেছ?
কেদার। ভাই অবিনাশ, ওর নাম কী, এক-একসময় তোমার কথা শুনে হঠাৎ ভ্রম হয় যে, যা বলছ বুঝি বা সত্যই বলছ! কী জানি, বৈকুণ্ঠবাবু মনে ভাবতেও পারেন যে,কী বলে ভালো—
বৈকুন্ঠ। (ব্যস্ত হইয়া) না না কেদারবাবু! আমি কিছু মনে ভাবছি নে। কিন্তু অবিনাশ, সত্যি কথা বলতে কি, তোমার ঠাট্টাগুলো কিছু রূঢ় হয়ে পড়ছে। বন্ধুকেও—
অবিনাশ। আমি তো ঠাট্টা করছি নে—
বৈকুণ্ঠ। অ্যাঁ! ঠাট্টা নয়! অভদ্র কোথাকার! কেদারবাবু আমার ঘরে আসেন সে আমার সৌভাগ্য। তুই আমার সামনে তাঁকে অপমান করিস!