কেদার। দেখ্ তিনকড়ে— অবিনাশ তো আমার গন্ধ পেলেই তেড়ে আসে—
তিনকড়ি। মানুষ চেনে দেখছি, আমার মতো অবোধ নয়।
কেদার। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, আমার শ্যালীর সঙ্গে তার বিবাহ দিয়ে এই জায়গাটাতেই বসবাস করব, আর ঘুরে বেড়াতে পারি নে—
তিনকড়ি। টিকতে পারবে না দাদা। তোমার মধ্যে একটা ঘূর্ণি আছেন, তিনিই বরাবর ঘুরিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ঘোরাবেন।
কেদার। এখন অবিনাশের দাদা বৈকুণ্ঠকে বশ করতে এসে আমার কী দুর্গতি হয়েছে দেখ্। কে জানত বুড়ো বই লেখে। এত বড়ো একখানা খাতা আমাকে পড়তে দিয়ে চলে গেছে—
তিনকড়ি। ওরে বাবা! ইঁদুরের মতো চুরি করে খেতে এসে খাতার জাঁতাকলের মধ্যে পড়ে গেছ দেখছি।
কেদার। কিন্তু তিনকড়ে, তুইই আমার সব প্ল্যান মাটি করবি।
তিনকড়ি। কিছু দরকার হবে না দাদা, তুমি একলাই মাটি করতে পারবে।
কেদার। দেখ্ তিনু, এ-সব ব্যস্ত হবার কাজ নয়। গণেশকে সিদ্ধিদাতা বলে কেন—তিনি মোটা লোকটি, খুব চেপে বসে থাকতে জানেন, দেখে মনে হয় না যে তাঁর কিছুতে কোনো গরজ আছে—
তিনকড়ি। কিন্তু তাঁর ইঁদুরটি—
কেদার। ফের বকছিস? লক্ষ্মীছাড়া, তুই একটু আড়ালে যা।
তিনকড়ি। চললুম দাদা। কিন্তু ফাঁকি দিয়ো না। সময়কালে অভাগা তিনকড়েকে মনে রেখো।
বৈকুণ্ঠ। দেখছেন কেদারবাবু?
কেদার। আজ্ঞে হাঁ, দেখছি বৈকি! কিন্তু আমার মতে, ওর নাম কী, বইয়ের নামটা যেন কিছু বড়ো হয়ে পড়েছে।
বৈকুণ্ঠ। বড়ো হোক, কিন্তু বিষয়টা বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রাচীন ও প্রচলিত সংগীতশাস্ত্রের আদিম উৎপত্তি ও ইতিহাস এবং নূতন সার্বভৌমিক স্বরলিপির সংক্ষিপ্ত ও সরল আদর্শ প্রকরণ’। এতে আর কোনো কথাটি বাদ গেল না।
কেদার। তা বাদ যায় নি। কিন্তু ওর নাম কী, মাপ করবেন বৈকুণ্ঠবাবু—কিছু বাদসাদ দিয়েই নাম রাখতে হয়। কিন্তু লেখা যা হয়েছে সে পড়তে পড়তে, ওর নাম কী, শরীর রোমাঞ্চ হয়ে ওঠে!
বৈকুণ্ঠ। হা হা হা হা! রোমাঞ্চ! আপনি ঠাট্টা করছেন।
কেদার। সে কী কথা!
বৈকুণ্ঠ। ঠাট্টার বিষয় বটে। ও আমার একটা পাগলামি। হা হা হা হা! সংগীতের উৎপত্তি ও ইতিহাস, মাথা আর মুণ্ডু। দিন খাতাটা। বুড়ো মানুষকে পরিহাস করবেন না কেদারবাবু।
কেদার। পরিহাস! ওর নাম কী, পরিহাস কি মশায় দু ঘন্টা ধরে কেউ করে। ভেবে দেখুন দেখি, কখন থেকে আপনার খাতা নিয়ে পড়ছি। তা হলে তো রামের বনবাসকেও, ওর নাম কী, কৈকেয়ীর পরিহাস বলতে পারেন।