প্রথম দর্ভক। বাবাঠাকুর, আমাদের সমস্ত পাড়া আজ ত্রাণ পেয়ে গেল। এতদিন তোমার চরণধুলো তো এখানে পড়ে নি।
আচার্য। সে আমার অভাগ্য, সে আমারই অভাগ্য।
দ্বিতীয় দর্ভক। বাবা, তোমার স্নানের জল কাকে দিয়ে তোলাব। এখানে তো—
আচার্য। বাবা, তোরাই তুলে আনবি।
প্রথম দর্ভক। আমরা তুলে আনব!সে কি হয়!
আচার্য। হাঁ বাবা, তোদের তোলা জলে আজ আমার অভিষেক হবে।
দ্বিতীয় দর্ভক। ওরে চল্ তবে ভাই, চল্। আমাদের পাটলা নদী থেকে জল আনি গে।
আচার্য। দেখো পঞ্চক, কাল এখানে এসে আমার ভারি গ্লানি বোধ হচ্ছিল।
পঞ্চক। আমি তো কাল রাত্রে ঘরের বাইরে শুয়েই কাটিয়ে দিয়েছি।
আচার্য। যখন এইরকম অত্যন্ত কুন্ঠিত হয়ে আপনাকে আদ্যোপান্ত পাপলিপ্ত মনে করে বসে আছি এমন সময় ওরা সন্ধ্যাবেলায় ওদের কাজ থেকে ফিরে এসে সকলে মিলে গান ধরলে—
নামবে কি সব বোঝা এবার, ঘুচবে কি সব দায়?
শুনতে শুনতে মনে হল আমার যেন একটা পাথরের দেহ গলে গেল। দিনের পর দিন কী ভার বয়েই বেড়িয়েছি। কিন্তু কতই সহজ সরল প্রাণ নিয়ে সেই পারের কাণ্ডারীর খেয়ায় চড়ে বসা!
পঞ্চক। আমি দেখছি দর্ভক জাতের একটা গুণ—ওরা একেবারে স্পষ্ট করে নাম নিতে জানে। আর তট তট তোতয় তোতয় করতে করতে আমার জিবের এমনি দশা হয়েছে যে, সহজ কথাটা কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোতে চায় না। আচার্যদেব, কেবল ভালো করে না ডাকতে পেরেই আমাদের বুকের ভিতরটা এমন শুকিয়ে এসেছে, একবার খুব করে গলা ছেড়ে ডাকতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু গলা খোলে না যে—রাজ্যের পুঁথি পড়ে পড়ে গলা বুজে গিয়েছে প্রভু। এমন হয়েছে আজ কান্না এলেও বেধে যায়।
আচার্য। সেইজন্যেই তো ভাবছি আমাদের গুরু আসবেন কবে। জঞ্জাল সব ঠেলে ফেলে দিয়ে আমাদের প্রাণটাকে একেবারে সরল করে দিন—হাতে করে ধরে সকলের সঙ্গে মিল করিয়ে দিন।
পঞ্চক। মনে হচ্ছে যেন ভিজে মাটির গন্ধ পাচ্ছি, কোথায় যেন বর্ষা নেমেছে।
আচার্য। ঐ, পঞ্চক শুনতে পাচ্ছ কি?
পঞ্চক। কী বলুন দেখি?
আচার্য। আমার মনে হচ্ছে যেন সুভদ্র কাঁদছে।
পঞ্চক। এখান থেকে কি শোনা যাবে? এ বোধ হয় আর-কোনো শব্দ।
আচার্য। তা হবে পঞ্চক, আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি তার কান্নাটা এমন করে আমাকে বেজেছে কেন জান? সে যে কান্না রাখতে পারে না তবু কিছুতে মানতে চায় না সে কাঁদছে।
পঞ্চক। এতক্ষণে ওরা তাকে মহাতামসে বসিয়েছে—আর সকলে মিলে খুব দূরে থেকে বাহবা দিয়ে বলছে সুভদ্র দেবশিশু। আর কিছু না, আমি যদি রাজা হতুম তা হলে ওদের সবাইকে কানে ধরে দেবতা করে দিতুম—কিছুতে ছাড়তুম না।
আচার্য। ওরা ওদের দেবতাকে কাঁদাচ্ছে পঞ্চক। সেই দেবতারই কান্নায় এ রাজ্যের সকল আকাশ আকুল হয়ে উঠেছে। তবু