তারে আজ থামায় কে রে!
সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে,
তারে আজ নামায় কে রে!
মহাপঞ্চক। পঞ্চক, নির্লজ্জ বানর কোথাকার, থাম্ বলছি, থাম্।
আমারে থামায় কে রে।
মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, আমি তোমাকে বলি নি একজটা দেবীর শাপ আরম্ভ হয়েছে? দেখছ, কী করে তিনি আমাদের সকলের বুদ্ধিকে বিচলিত করে তুলছেন—ক্রমে দেখবে অচলায়তনের একটি পাথরও আর থাকবে না।
পঞ্চক। না থাকবে না, থাকবে না, পাথরগুলো সব পাগল হয়ে যাবে; তারা কে কোথায় ছুটে বেরিয়ে পড়বে, তারা গান ধরবে—
ওরে ভাই, নাচ্ রে ও ভাই নাচ্ রে—
আজ ছাড়া পেয়ে বাঁচ্ রে-
লাজ ভয় ঘুচিয়ে দে রে।
তোরে আজ থামায় কে রে!
মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছ কী! সর্বনাশ শুরু হয়েছে, বুঝতে পারছ না! ওরে সব ছন্নমতি মূর্খ, অভিশপ্ত বর্বর, আজ তোদের নাচবার দিন?
পঞ্চক। সর্বনাশের বাজনা বাজলেই নাচ শুরু হয় দাদা।
মহাপঞ্চক। চুপ কর্ লক্ষ্মীছাড়া! ছাত্রগণ, তোমরা আত্মবিসমৃত হোয়ো না। ঘোর বিপদ আসন্ন সে কথা স্মরণ রেখো।
বিশ্বম্ভর। আচার্যদেব, পায়ে ধরি, সুভদ্রকে আমাদের হাতে দিন, তাকে তার প্রায়শ্চিত্ত থেকে নিরস্ত করবেন না।
আচার্য। না বৎস, এমন অনুরোধ কোরো না।
সঞ্জীব। ভেবে দেখুন, সুভদ্রের কতবড়ো ভাগ্য। মহাতামস কজন লোকে পারে। ও যে ধরাতলে দেবত্ব লাভ করবে।
আচার্য। গায়ের জোরে দেবতা গড়বার পাপে আমাকে লিপ্ত কোরো না। সে মানুষ, সে শিশু, সেইজন্যই সে দেবতাদের প্রিয়।
তৃণাঞ্জন। দেখুন, আপনি আমাদের আচার্য, আমাদের প্রণম্য, কিন্তু যে অন্যায় আজ করছেন, তাতে আমরা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
আচার্য। করো, বলপ্রয়োগ করো, আমাকে মেনো না, আমাকে মারো, আমি অপমানেরই যোগ্য, তোমাদের হাত দিয়ে আমার যে শাস্তি আরম্ভ হল তাতেই বুঝতে পারছি গুরুর আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু সেইজন্যেই বলছি শাস্তির কারণ আর বাড়তে দেব না। সুভদ্রকে তোমাদের হাতে দিতে পারব না।
তৃণাঞ্জন। পারবেন না?
আচার্য। না।
মহাপঞ্চক। তা হলে আর দ্বিধা করা নয়। তৃণাঞ্জন, এখন তোমাদের উচিত ওঁকে জোর করে ধরে নিয়ে ঘরে বন্ধ করা। ভীরু, কেউ সাহস করছ না? আমাকেই তবে এ কাজ করতে হবে?