বাধাবাঁধন নেই গো নেই।
দেখি, খুঁজি, বুঝি,
কেবল ভাঙি, গড়ি, যুঝি,
মোরা সব দেশেতেই বেড়াই ঘুরে সব সাজেই।
পারি, নাইবা পারি,
নাহয় জিতি কিংবা হারি,
যদি অমনিতে হাল ছাড়ি, মরি সেই লাজেই।
আপন হাতের জোরে
আমরা তুলি সৃজন করে,
আমরা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি, থাকি তার মাঝেই।
পঞ্চক। সর্বনাশ করলে রে—আমার সর্বনাশ করলে। আমার আর ভদ্রতা রাখলে না। এদের তালে তালে আমারও পা-দুটো নেচে উঠছে। আমাকে সুদ্ধ এরা টানবে দেখছি। কোন্ দিন আমিও লোহা পিটব রে, লোহা পিটব—কিন্তু খেঁসারির ডাল—না না, পালা ভাই, পালা তোরা। দেখছিস নে, পড়ব বলে পুঁথি সংগ্রহ করে এনেছি।
দ্বিতীয় শোণপাংশু। ও কী পুঁথি দাদা? ওতে কী আছে?
পঞ্চক। এ আমাদের দিক্চক্রচন্দ্রিকা—এতে বিস্তর কাজের কথা আছে রে।
প্রথম শোণপাংশু। কিরকম?
পঞ্চক। দশটা দিকের দশ রকম রঙ গন্ধ আর স্বাদ আছে কি না এতে তার সমস্ত খোলসা করে লিখেছে। দক্ষিণ দিকের রঙটা হচ্ছে রুইমাছের পেটের মতো, ওর গন্ধটা দধির গন্ধ, স্বাদটা ঈষৎ মিষ্টি; পুব দিকের রঙটা হচ্ছে সবুজ, গন্ধটা মদমত্ত হাতির মতো, স্বাদটা বকুলের ফলের মতো কষা—নৈর্ঋত কোণের—
দ্বিতীয় শোণপাংশু। আর বলতে হবে না দাদা। কিন্তু দশ দিকে তো আমরা এ-সব রঙ গন্ধ দেখতে পাইনে।
পঞ্চক। দেখতে পেলে তো দেখাই যেত। যে ঘোর মূর্খ সেও দেখত। এ-সব কেবল পুঁথিতে পড়তে পাওয়া যায়, জগতে কোথাও দেখবার জো নেই।
প্রথম শোণপাংশু। তা হলে দাদা তুমি পুঁথিই পড়ো, আমরা চললুম।
দ্বিতীয় শোণপাংশু। এদের মতো চোখকান বুজে যদি আমাদের বসে বসে ভাবতে হত তা হলে তো আমরা পাগল হয়ে যেতুম।
তৃতীয় শোণপাংশু। চল্ ভাই, ঘুরে আসি, শিকারের সন্ধান পেয়েছি। নদীর ধারে গণ্ডারের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে। [ প্রস্থান
পঞ্চক। এই শোণপাংশুগুলো বাইরে থাকে বটে, কিন্তু দিনরাত্রি এমনি পাক খেয়ে বেড়ায় যে, বাহিরটাকে দেখতেই পায় না। এরা যেখানে থাকে সেখানে একেবারে অস্থিরতার চোটে চতুর্দিক ঘুলিয়ে যায়। এরা একটু থেমেছে অমনি সমস্ত আকাশটা যেন গান গেয়ে উঠেছে। এই শোণপাংশুদের দেখছি ওরা চুপ করলেই আর কিছু শুনতে পায় না—ওরা নিজের গোলমালটা শোনে সেইজন্যে এত গোল করতে ভালোবাসে। কিন্তু এই আলোতে ভরা নীল আকাশটা আমার রক্তের ভিতরে গিয়ে কথা কচ্ছে, আমার সমস্ত শরীরটা গুন গুন করে বেড়াচ্ছে।
ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।