পঞ্চক। দেখেছি বৈকি। ও মাসে শনিবারে যেদিন মহাময়ূরী দেবীর পূজা পড়ল সেদিন আমি কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে তার উপর পাঁচটা শেয়ালকাঁটার পাতা আর তিনটে মাষকলাই সাজিয়ে নিজে আঠারো বার ফুঁ দিয়েছি।
সকলে। অ্যাঁ! কী ভয়ানক! আঠারো বার!
সুভদ্র। পঞ্চকদাদা, তোমার কী হল।
পঞ্চক। তিনদিনের দিনে যে সাপটা এসে আমাকে নিশ্চয় কামড়াবে কথা ছিল সে আজ পর্যন্ত আমাকে খুঁজে বের করতে পারে নি।
প্রথম বালক। কিন্তু ভয়ানক পাপ করেছ তুমি।
দ্বিতীয় বালক। মহাময়ূরী দেবী ভয়ানক রাগ করেছেন।
পঞ্চক। তাঁর রাগটা কিরকম সেইটে দেখবার জন্যেই তো এ কাজ করেছি।
সুভদ্র। কিন্তু পঞ্চকদাদা, যদি তোমাকে সাপে কামড়াত।
পঞ্চক। তা হলে এ সম্বন্ধে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোথাও কোনো সন্দেহ থাকত না।
প্রথম বালক। কিন্তু পঞ্চকদাদা, আমাদের উত্তর দিকের জানলাটা-
পঞ্চক। সেটাও আমাকে একবার খুলে দেখতে হবে স্থির করেছি।
সুভদ্র। তুমিও খুলে দেখবে?
পঞ্চক। হাঁ ভাই সুভদ্র, তা হলে তুই তোর দলের একজন পাবি।
প্রথম বালক। না পঞ্চকদাদা, পায়ে পড়ি পঞ্চকদাদা, তুমি—
পঞ্চক। কেন রে, তোদের তাতে ভয় কী?
দ্বিতীয় বালক। সে যে ভয়ানক।
পঞ্চক। ভয়ানক না হলে মজা কিসের?
তৃতীয় বালক। সে যে ভয়ানক পাপ।
প্রথম বালক। মহাপঞ্চকদাদা আমাদের বলে দিয়েছেন, ওতে মাতৃহত্যার পাপ হয়; কেননা উত্তর দিকটা যে একজটা দেবীর।
পঞ্চক। মাতৃহত্যা করলুম না অথচ মাতৃহত্যার পাপটা করলুম, সেই মজাটা কিরকম দেখতে আমার ভয়ানক কৌতূহল।
প্রথম বালক। তোমার ভয় করবে না?
পঞ্চক। কিছু না। ভাই সুভদ্র, তুই কী দেখলি বল্ দেখি।
দ্বিতীয় বালক। না না, বলিস নে।
তৃতীয় বালক। না, সে আমরা শুনতে পারব না—কী ভয়ানক!
প্রথম বালক। আচ্ছা, একটু, খুব একটুখানি বল্ ভাই।
সুভদ্র। আমি দেখলুম—সেখানে পাহাড়, গোরু চরছে—
বালকগণ। (কানে আঙুল দিয়া) ও বাবা! না না, আর শুনব না। আর বোলো না সুভদ্র। ওই যে উপাধ্যায়মশায় আসছেন। চল্ চল্—আর না।
পঞ্চক। কেন। এখন তোমাদের কী।
প্রথম বালক। বেশ, তাও জান না বুঝি। আজ যে পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্র—