সঞ্জীব। তোমার সেই গুণে উপাধ্যায়মশায়কে যে মুগ্ধ করতে পেরেছ তা তো বোধ হয় না।
পঞ্চক। আমি তাঁকে কত বোঝাবার চেষ্টা করি যে, বিদ্যা সম্বন্ধে আমার একটুও নড়চড় নেই—ঐ যাকে বল ধ্রুবনক্ষত্র—তাতে সুবিধা এই যে, এখানকার ছাত্ররা কে কতদূর এগোল তা আমার সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে।
জয়োত্তম। তোমার আশ্চর্য এই সুযুক্তিতে উপাধ্যায়মশায়ের বোধ হয়—
পঞ্চক। না, কিছু না —তাঁর মনে কিছুমাত্র বিকার ঘটল না। আমার সম্বন্ধে পূর্বে তাঁর যে ধারণা ছিল সেইটেই দেখলুম আরো পাকা হল।
সঞ্জীব। আমরা যদি উপাধ্যায়মশায়কে তোমার মতন অমন যা-তা বলতুম তা হলে রক্ষা থাকত না। কিন্তু পঞ্চকের বেলায়—
পঞ্চক। তার মানে আছে। কুতর্কটা আমার পক্ষে এমনি সুন্দর স্বাভাবিক যে, সেটা আমার মুখে ভারি মিষ্ট শোনায়। সকলেই খুশি হয়ে বলে, ঠিক হয়েছে, পঞ্চকের মতোই কথা হয়েছে। কিন্তু ঘোরতর বুদ্ধির পরিচয় না দিতে পারলে তোমাদের আদর নেই, এমনি তোমরা হতভাগ্য।
জয়োত্তম। যাও ভাই পঞ্চক, আর বোকো না। আমরা চললুম। তুমি একটু মন দিয়ে পড়ো।
পঞ্চক। হবে না, আমার কিছুই হবে না। এখানকার একটা মন্ত্রও আমার খাটল না।
দূরে কোথায় দূরে দূরে
মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে
যে বাঁশিতে বাতাস কাঁদে
সেই বাঁশিটির সুরে সুরে।
যে পথ সকল দেশ পারায়ে
উদাস হয়ে যায় হারায়ে,
সে পথ বেয়ে কাঙাল পরান
যেতে চায় কোন্ অচিন পুরে।
ও কী ও! কান্না শুনি যে! এ নিশ্চয়ই সুভদ্র। আমাদের এই আয়তনে ওর চোখের জল আর শুকোল না। ওর কান্না আমি সইতে পারি নে!
পঞ্চক। তোর কোনো ভয় নেই ভাই, কোনো ভয় নেই। তুই আমার কাছে বল্, কী হয়েচে বল্।
সুভদ্র। আমি পাপ করেছি।
পঞ্চক। পাপ করেছিস? কী পাপ?
সুভদ্র। সে আমি বলতে পারব না! ভয়ানক পাপ। আমার কী হবে!