জয়োত্তম। না হে, মহাপঞ্চক বড়ো রাগ করেন। তিনি মনে করেন, তোমার যে কিছু হচ্ছে না তার কারণ আমরা।
পঞ্চক। আমি যে কারও কোনো সাহায্য না নিয়ে কেবলমাত্র নিজগুণেই অকৃতার্থ হতে পারি, দাদা আমার এটুকু ক্ষমতাও স্বীকার করেন না, এতেই আমি বড়ো দুঃখিত হই। আচ্ছা ভাই, তোমরা ঐখানে একটু তফাতে বসে কথাবার্তা কও। যদি দেখ একটু অন্যমনস্ক হয়েছি, আমাকে সতর্ক করে দিয়ো। স্ফট স্ফট স্ফোটয় স্ফোটয় –
জয়োত্তম। আচ্ছা বেশ, এইখানে আমরা বসছি।
সঞ্জীব। বিশ্বম্ভর, তুমি যে বললে এবার আমাদের আয়তনে গুরু আসবেন, সেটা শুনলে কার কাছ থেকে?
বিশ্বম্ভর। কী জানি, কারা সব বলা-কওয়া করছিল। কেমন করে চারি দিকেই রটে গিয়েছে যে, চাতুর্মাস্যের সময় গুরু আসবেন।
পঞ্চক। ওহে বিশ্বম্ভর, বল কী? আমাদের গুরু আসবেন নাকি?
সঞ্জীব। আবার পঞ্চক! তোমার কাজ তুমি করো-না।
পঞ্চক। ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়-
জয়োত্তম। কিন্তু অধ্যাপকদের কারও কাছে শুনেছ কি? মহাপঞ্চক কী বলেন?
বিশ্বম্ভর। তাঁকে জিজ্ঞাসা করাই বৃথা। মহাপঞ্চক কারও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সময় নষ্ট করেন না। আজকাল তিনি আর্যঅষ্টোত্তরশত নিয়ে পড়েছেন—তাঁর কাছে ঘেঁষে কে!
পঞ্চক। চলো-না ভাই, আচার্যদেবের কাছে যাই। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই—
জয়োত্তম। আবার! ফের!
পঞ্চক। ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়—
জয়োত্তম। আমার তো উনিশ বছর বয়স হল—এর মধ্যে একবারও আমাদের গুরু এ আয়তনে আসেন নি। আজ তিনি হঠাৎ আসতে যাবেন এটা বিশ্বাস করতে পারি নে।
সঞ্জীব। তোমার তর্কটা কেমনতরো হলো হে জয়োত্তম? উনিশ বছর আসেন নি বলে বিশ বছরে আসাটা অসম্ভব হল কোন্ যুক্তিতে?
বিশ্বম্ভর। তা হলে অঙ্কশাস্ত্রটাই অপ্রমাণ হয়ে যায়। তবে তো উনিশ পর্যন্ত বিশ নেই বলে উনিশের পরেও বিশ থাকতে পারে না।
সঞ্জীব। শুধু অঙ্ক কেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটাও টেঁকে না। কারণ, যা এ মুহূর্তে ঘটে নি তা ও মুহূর্তেই বা ঘটে কী করে।
জয়োত্তম। আরে, ঐটেই তো আমার তর্ক। কে বললে ঘটে? যা পূর্বে ঘটে নি তা কিছুতেই পরে ঘটতে পারে না। আচ্ছা, এসো, কিছু যে ঘটে সেইটে প্রমাণ করে দাও।
পঞ্চক। (জয়োত্তমের কাঁধে চড়িয়া) প্রমাণ? এই দেখো প্রমাণ। ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়-
জয়োত্তম। আঃ পঞ্চক! কর কী! নাবো বলছি —আঃ নাবো।
পঞ্চক। আমি যে তোমার কাঁধে চড়েছি সেটা প্রমাণ না করে দিলে আমি কিছুতেই নাবছি নে। ঘূণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়—
মহাপঞ্চক। পঞ্চক, তুমি বড়ো উৎপাত করছ।
পঞ্চক। দাদা, এরাই গোল করছিল। আমি আরও থামিয়ে দেবার জন্যেই এসেছি। তট তট তোতয় তোতয় স্ফট স্ফট—