Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)


নটীর পূজা - প্রথম অঙ্ক, ৪
নটীর পূজা
প্রথম অঙ্ক
মগধপ্রাসাদ কুঞ্জবনে
মহারানী লোকেশ্বরী, ভিক্ষুণী উৎপলপর্ণা

লোকেশ্বরী। মহারাজ বিম্বিসার আজ আমাকে স্মরণ করেছেন?

ভিক্ষুণী। হাঁ।

লোকেশ্বরী। আজ তাঁর অশোকচৈত্যে পূজা-আয়োজনের দিন— সেইজন্যেই বুঝি?

ভিক্ষুণী। আজ বসন্তপূর্ণিমা।

লোকশ্বরী। পূজা? কার পূজা?

ভিক্ষুণী। আজ ভগবান বুদ্ধের জন্মোৎসব— তাঁর উদ্দেশে পূজা।

লোকেশ্বরী। আর্যপুত্রকে বলো গিয়ে আমার সব পূজা নিঃশেষে চুকিয়ে দিয়েছি। কেউ বা ফুল দেয় দীপ দেয়— আমি আমার সংসার শূন্য করে দিয়েছি।

ভিক্ষুণী। কী বলছ মহারানী?

লোকেশ্বরী। আমার একমাত্র ছেলে, চিত্র— রাজপুত্র আমার,—তাকে ভুলিয়ে নিয়ে গেল ভিক্ষু করে। তবু বলে পূজা দাও। লতার মূল কেটে দিলে তবু চায় ফুলের মঞ্জরী।

ভিক্ষুণী। যাকে দিয়েছ তাকে হারাওনি। কোলে যাকে পেয়েছিলে আজ বিশ্বে তাকেই পেয়েছ।

লোকেশ্বরী। নারী, তোমার ছেলে আছে?

ভিক্ষুণী। না।

লোকশ্বরী। কোনোদিন ছিল?

ভিক্ষুণী। না। আমি প্রথমবয়সেই বিধবা।

লোকেশ্বরী। তাহলে চুপ করো। যে-কথা জান না সে-কথা বলো না।

ভিক্ষুণী। মহারানী, সত্যধর্মকে তুমিই তো রাজান্তঃপুরে সকলের প্রথমে আহ্বান করে এনেছিলে। তবে কেন আজ—

লোকেশ্বরী। আশ্চর্য—মনে আছে তো দেখি। ভেবেছিলেম সে-কথা বুঝি তোমাদের গুরু ভুলে গিয়েছেন। ভিক্ষু ধর্মরুচিকে ডাকিয়ে প্রতিদিন কল্যাণপঞ্চবিংশতিকা পাঠ করিয়ে তবে জল গ্রহণ করেছি, একশো ভিক্ষুকে অন্ন দিয়ে তবে ভাঙত আমার উপবাস, প্রতিবৎসর বর্ষার শেষে সমস্ত সংঘকে ত্রিচীবর বস্ত্র দেওয়া ছিল আমার ব্রত। বুদ্ধের ধর্মবৈরী দেবদত্তের উপদেশে যেদিন এখানে সকলেরই মন টলমল, একা আমি অবিচলিত নিষ্ঠায় ভগবান তথাগতকে এই উদ্যানের অশোকতলায় বসিয়ে সকলকে ধর্মতত্ত্ব