সন্ন্যাসী। বল কী, এর চেয়ে সুন্দর কি আর কিছু আছে। ওই ছেলেটিই তো আজ শারদার বরপুত্র হয়ে তাঁর কোল উজ্জ্বল করে বসেছে। তিনি তাঁর আকাশের সমস্ত সোনার আলো দিয়ে ওকে বুকে চেপে ধরেছেন। আহা, আজ এই বালকের ঋণশোধের মতো এমন শুভ্র ফুলটি কি কোথাও ফুটেছে, চেয়ে দেখো তো। লেখো, লেখো, বাবা, তুমি লেখো, আমি দেখি। তুমি পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি লিখছ, আর ছুটির পর ছুটি পাচ্ছ- তোমার এত ছুটির আয়োজন আমরা তো পণ্ড করতে পারব না। দাও বাবা, একটা পুঁথি আমাকে দাও, আমিও লিখি। এমন দিনটা সার্থক হক।
ঠাকুরদাদা। আছে আছে চশমাটা ট্যাঁকে আছে, আমিও বসে যাই-না।
প্রথম বালক। ঠাকুর, আমরাও লিখব। সে বেশ মজা হবে।
দ্বিতীয় বালক। হাঁ হাঁ, সে বেশ মজা হবে।
উপনন্দ। বল কী ঠাকুর, তোমাদের যে ভারি কষ্ট হবে।
সন্ন্যাসী। সেইজন্যেই বসে গেছি। আজ আমরা সব মজা করে কষ্ট করব। কী বল, বাবাসকল। আজ একটা কিছু কষ্ট না করলে আনন্দ হচ্ছে না।
সকলে। (হাততালি দিয়া) হাঁ, হাঁ, নইলে মজা কিসের।
প্রথম বালক। দাও, দাও, আমাকে একটা পুঁথি দাও।
দ্বিতীয় বালক। আমাকেও একটা দাও-না।
উপনন্দ। তোমরা পারবে তো ভাই?
প্রথম বালক। খুব পারব। কেন পারব না।
উপনন্দ। শ্রান্ত হবে না তো?
দ্বিতীয় বালক। কক্খনো না।
উপনন্দ। খুব ধরে ধরে লিখতে হবে কিন্তু।
প্রথম বালক। তা বুঝি পারি নে? আচ্ছা তুমি দেখো।
উপনন্দ। ভুল থাকলে চলবে না।
দ্বিতীয় বালক। কিচ্ছু ভুল থাকবে না!
প্রথম বালক। এ বেশ মজা হচ্ছে। পুঁথি শেষ করব তবে ছাড়ব।
দ্বিতীয় বালক। নইলে ওঠা হবে না।
তৃতীয় বালক। কী বল ঠাকুরদা, আজ লেখা শেষ করে দিয়ে তবে উপনন্দকে নিয়ে নৌকো বাচ করতে যাব। বেশ মজা!
ছেলেরা। এই যে পরদেশী, আমাদের পরদেশী।
সন্ন্যাসী। এ কি। তুমি পরদেশী না কি?
শেখর। পরদেশী আমার সাজ মাত্র, আসলে আমি সবদেশী।
সন্ন্যাসী। সাজের দরকার কী ছিল?
শেখর। রাজাকে সাজতে হয় সন্ন্যাসী, রাজা যে কী জিনিস সেই বোঝবার জন্যে। যে-মানুষ সব দেশেই দেশকে খুঁজতে চায়