কুমারসেন। প্রজাগণ সবে —
ইলা। তারা কি আমার চেয়ে হয় ম্রিয়মাণ
তব অদর্শনে? রাজ্যে তুমি চলে গেলে
মনে হয়, আর আমি নেই। যতক্ষণ
তুমি মোরে মনে কর ততক্ষণ আছি,
একাকিনী কেহ নই আমি। রাজ্যে তব
কত লোক, কত চিন্তা, কত কার্যভার,
কত রাজ-আড়ম্বর! আর সব আছে,
শুধু সেথা ক্ষুদ্র ইলা নাই।
কুমারসেন। সব আছে
তবু কিছু নাই, তুমি না থেকেও আছ
প্রাণতমে!
ইলা। মিছে কথা বলো না কুমার!
তুমি রাজা আপন রাজত্বে — এ অরণ্যে
আমি রানী, তুমি প্রজা মোর। কোথা যাবে?
যেতে আমি দিব না তোমারে। সখী, তোরা
আয়। এরে বাঁধ্ ফুলপাশে, কর গান,
কেড়ে নে সকলে মিলি রাজ্যের ভাবনা।
যদি আসে তবে কেন যেতে চায়?
দেখা দিয়ে তবে কেন গো লুকায়?
চেয়ে থাকে ফুল হৃদয় আকুল, বায়ু বলে এসে ‘ভেসে যাই'।
ধরে রাখো, ধরে রাখো, সুখপাখি ফাঁকি দিয়ে উড়ে যায়।
পথিকের বেশে সুখনিশি এসে বলে হেসে হেসে, ‘মিশে যাই'
জেগে থাকো, জেগে থাকো, বরষের সাধ নিমেষে মিলায়।
কুমারসেন। আমারে কী করেছিস, অয়ি কুহকিনী!
নির্বাপিত আমি। সমস্ত জীবন মন
নয়ন বচন ধাইছে তোমার পানে
কেবল বাসনাময় হয়ে। যেন আমি
আমারে ভাঙিয়ে দিয়ে ব্যাপ্ত হয়ে যাব
তোমার মাঝারে প্রিয়ে! যেন মিশে রব