শংকর। তাতে দোষ হয়েছে কী? হাজার হোক, খুড়ো তো বটে।
দ্বিতীয় সৈনিক। তা তো বটেই। কিন্তু যে দেশের যেমন নিয়ম — আমাদের নিয়ম আছে যে —
শংকর। নিয়ম তোরা মানবি, আমরা মানব, বড়োলোকের আবার নিয়ম কী। সবাই যদি নিয়ম মানবে তবে নিয়ম গড়বে কে!
প্রথম সৈনিক। আচ্ছা, দাদা, তা যেন হল — কিন্তু এই পাঁচ বছর ধরে বিয়ে করা এ কেমন নিয়ম দাদা? আমি তো বলি, বিয়ে করা বাণ খাওয়ার মতো — চট্ করে লাগল তীর, তার পরে ইহজন্মের মতো বিঁধে রইল। আর ভাবনা রইল না। কিন্তু দাদা, পাঁচ বৎসর ধরে এ কী রকম কারখানা!
শংকর। তোদের আশ্চর্য ঠেকবে বলে কি যে দেশের যা নিয়ম তা উলটে যাবে? নিয়ম তো কারো ছাড়বার জো নেই। এ সংসার নিয়মেই চলছে। যা যা আর বকিস নে যা! এ-সকল কথা তোদের মুখে ভালো শোনায় না।
প্রথম সৈনিক। তা চললুম। আজকাল আমাদের দাদার মেজাজ ভালো নেই। একেবারে শুকিয়ে যেন খড়্ খড়্ করছে।
[ সৈনিকদ্বয়ের প্রস্থান
সুমিত্রা। তুমি কি শংকরদাদা?
শংকর। কে তুমি ডাকিলে
পুরাতন পরিচিত স্নেহভরা সুরে?
কে তুমি পথিক?
সুমিত্রা। এসেছি বিদেশ হতে।
শংকর। এ কি স্বপ্ন দেখি আমি? কী মন্ত্র-কুহকে
কুমার আবার এল বালক হইয়া
শংকরের কাছে! যেন সেই সন্ধ্যাবেলা
খেলাশ্রান্ত সুকুমার বাল্যতনুখানি
চরণকমল ক্লিষ্ট, বিবর্ণ কপোল,
ক্লান্ত শিশু-হিয়া, বৃদ্ধ শংকরের বুকে
বিশ্রাম মাগিছে।
সুমিত্রা। জালন্ধর হতে আমি
এসেছি সংবাদ লয়ে কুমারের কাছে।
শংকর। কুমারের বাল্যকাল এসেছে আপনি
কুমারের কাছে! শৈশবের খেলাধুলা
মনে করে দিতে, ছোটো বোন পাঠায়েছে
তারে! দূত তুমি এ মূর্তি কোথায় পেলে?
মিছে বকিতেছি কত! ক্ষমা করো মোরে।