এমন সময় নির্মলা অকুণ্ঠিত মর্যাদার সহিত গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া নমস্কার করিয়া দাঁড়াইল
হঠাৎ সকলেই স্তম্ভিত হইয়া গেল। অশ্রুপূর্ণ ক্ষোভে তাহার কণ্ঠস্বর আর্দ্র
নির্মলা। আপনাদের কী উদ্দেশ্য এবং আপনারা দেশের কাজে কত দূর পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত আছেন তা আমি কিছুই জানি নে, কিন্তু আমি আমার মামাকে জানি — তিনি যে পথে যাত্রা করে চলেছেন আপনারা কেন আমাকে সে পথে তাঁর অনুসরণ করতে বাধা দিচ্ছেন।
শ্রীশ নিরুত্তর, পূর্ণ কুণ্ঠিত - অনুতপ্ত, বিপিন প্রশান্ত - গম্ভীর, চন্দ্রবাবু সুগভীর চিন্তামগ্ন
নির্মলা। ( পূর্ণ এবং শ্রীশের প্রতি অশ্রুজলস্নাত কটাক্ষপাত করিয়া ) আমি যদি কাজ করতে চাই, যিনি আমার আশৈশবের গুরু, মৃত্যু পর্যন্ত যদি সকল শুভচেষ্টায় তাঁর অনুবর্তিনী হতে ইচ্ছা করি, আপনারা কেবল তর্ক করে আমার অযোগ্যতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন কেন। আপনারা আমাকে কী জানেন।
শ্রীশ স্তব্ধ। পূর্ণ ঘর্মাক্ত
নির্মলা। আমি আপনাদের কুমার - সভা বা অন্য কোনো সভা জানি নে, কিন্তু যাঁর শিক্ষায় আমি মানুষ হয়েছি তিনি যখন কুমার - সভাকে অবলম্বন করেই তাঁর জীবনের সমস্ত উদ্দেশ্য - সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন এই কুমার - সভা থেকে আপনারা আমাকে দূরে রাখতে পারবেন না। ( চন্দ্রবাবুর দিকে ফিরিয়া ) তুমি যদি বল আমি তোমার কাজের যোগ্য নই তা হলে আমি বিদায় হব, কিন্তু এঁরা আমাকে কী জানেন। এঁরা কেন আমাকে তোমার অনুষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন করবার জন্যে সকলে মিলে তর্ক করছেন।
শ্রীশ। ( বিনীত মৃদুস্বরে ) মাপ করবেন, আমি আপনার সম্বন্ধে কোনো তর্ক করি নি, আমি সাধারণত স্ত্রীজাতি সম্বন্ধেই বলছিলুম।
নির্মলা। আমি স্ত্রীজাতি পুরুষজাতির প্রভেদ নিয়ে কোনো বিচার করতে চাই নে — আমি নিজের অন্তঃকরণ জানি এবং যাঁর উন্নত দৃষ্টান্তকে আশ্রয় করে রয়েছি তাঁর অন্তঃকরণ জানি, কাজে প্রবৃত্ত হতে এর বেশি আমার আর - কিছু জানবার দরকার নেই।
চন্দ্রবাবু নিজের দক্ষিণ করতল চোখের অত্যন্ত কাছে লইয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন
পূর্ণ খুব চমৎকার করিয়া একটা কিছু বলিবার ইচ্ছা করিল —
কিন্তু তাহার মুখ দিয়া কোনো কথাই বাহির হইল না
পূর্ণ। ( মনে মনে অনেক আবৃত্তি করিয়া ) দেবী, এই পঙ্কিল পৃথিবীর কাজে কেন আপনার পবিত্র দুইখানি হস্ত প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন।
কথাটা মনে যেমন লাগিতেছিল মুখে তেমন শোনাইল না, পূর্ণ বলিয়াই বুঝিতে পারিল কথাটা
গদ্যের মধ্যে পদ্যের মতো কিছু যেন বাড়াবাড়ি হইয়া পড়িল —
লজ্জায় তাহার কান লাল হইয়া উঠিল