পূর্ণ। চন্দ্রবাবু, যদি বসেন তা হলে একটা কথা —
চন্দ্রবাবু। না, আমি বলছিলুম, যেখানে যেখানে যাব সেখানকার ঐতিহাসিক জনশ্রুতি এবং পুরাতন পুঁথি সংগ্রহ করা আমাদের কাজ হবে ; শিলালিপি তাম্রশাসন এগুলোও সন্ধান করতে হবে — অতএব প্রাচীন - লিপি - পরিচয়টাও আমাদের কিছুদিন অভ্যাস করা আবশ্যক।
পূর্ণ। সে - সব তো পরের কথা, আপাতত —
চন্দ্রবাবু। না না, আমি বলছি নে সকলকেই সব বিদ্যা শিখতে হবে, তা হলে কোনো কালে শেষ হবে না। অভিরুচি - অনুসারে ওর মধ্যে আমরা কেউ - বা একটা কেউ - বা দুটো - তিনটে শিক্ষা করব —
শ্রীশ। কিন্তু, তা হলেও —
চন্দ্রবাবু। ধরো, পাঁচ বছর। পাঁচ বছরে আমরা প্রস্তুত হয়ে বেরোতে পারব। যারা চিরজীবনের ব্রত গ্রহণ করবে, পাঁচ বছর তাদের পক্ষে কিছুই নয়। তা ছাড়া এই পাঁচ বছরেই আমাদের পরীক্ষা হয়ে যাবে ; যাঁরা টিঁকে থাকতে পারবেন তাঁদের সম্বন্ধে আর-কোনো সন্দেহ থাকবে না।
পূর্ণ। কিন্তু দেখুন, আমাদের সভাটা যে স্থানান্তর করা হচ্ছে —
চন্দ্রবাবু। না পূর্ণবাবু, আজ আর কিছুতেই না, আমার অত্যন্ত জরুরি কাজ আছে। পূর্ণবাবু, আমার কথাগুলো ভালো করে চিন্তা করে দেখো। আপাতত মনে হতে পারে অসাধ্য, কিন্তু তা নয়। দুঃসাধ্য বটে — তা, ভালো কাজ মাত্রই দুঃসাধ্য। আমরা যদি পাঁচটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লোক পাই তা হলে আমরা যা কাজ করব তা চিরকালের জন্য ভারতবর্ষকে আচ্ছন্ন করে দেবে।
শ্রীশ। কিন্তু, আপনি যে বলছিলেন গোরুর গাড়ির চাকা প্রভৃতি ছোটো ছোটো জিনিস —
চন্দ্রবাবু। ঠিক কথা, আমি তাকেও ছোটো মনে করে উপেক্ষা করি নে এবং বড়ো কাজকেও অসাধ্য জ্ঞান করে ভয় করি নে —
পূর্ণ। কিন্তু, সভার অধিবেশন সম্বন্ধেও —
চন্দ্রবাবু। সে - সব কথা কাল হবে পূর্ণবাবু। আজ তবে চললুম।
[ প্রস্থান
বিপিন। ভাই শ্রীশ, চুপচাপ যে। এক মাতালের মাতলামি দেখে অন্য মাতালের নেশা ছুটে যায়। চন্দ্রবাবুর উৎ সাহে তোমাকে সুদ্ধ দমিয়ে দিয়েছে।
শ্রীশ। না হে, অনেক ভাববার কথা আছে। উৎসাহ কি সব সময়ে, কেবল বকাবকি করে। কখনো বা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে থাকে, সেইটেই হল সাংঘাতিক অবস্থা।
বিপিন। পূর্ণবাবু, হঠাৎ পালাচ্ছ যে?
পূর্ণ। সভাপতিমশায়কে রাস্তায় ধরতে যাচ্ছি, পথে যেতে যেতে যদি দৈবাৎ আমার দুটো - একটা কথায় কর্ণপাত করেন।
বিপিন। ঠিক উল্টো হবে। তাঁর যে - ক'টা কথা বাকি আছে সেইগুলো তোমাকে শোনাতে শোনাতে কোথায় যাবার আছে সে কথা ভুলেই যাবেন।