শ্রীশ ও বিপিন। ঠিক কথা। ঘরটা একবার দেখেই আসা যাক-না।
পূর্ণ বিমর্ষ হইয়া নিরুত্তর রহিল। পাশের ঘরেও চাবি একবার ঠুন করিল
কিন্তু অত্যন্ত অপ্রসন্ন সুরে
অক্ষয়। চন্দ্রবাবু, এখনই আসুন - না, দেখিয়ে আনি।
চন্দ্রবাবু। চলুন।
[ চন্দ্রবাবু ও অক্ষয়ের প্রস্থান
বিপিন। দেখো পূর্ণবাবু, সত্যি কথা বলছি তোমাকে, চিরকুমার - সভার ফ্রন্টিয়ার পলিসিতে আমরা পর্দা জিনিসটার অনুমোদন করি নে। ঐখান থেকেই শত্রুপ্রবেশের পথ।
পূর্ণ। মানে কী হল।
বিপিন। পর্দার মতো উড়ুক্ষু জিনিস, অল্প একটু হাওয়াতে চঞ্চল হয়ে ওঠে, কুমার - সভার সে যোগ্য নয়।
শ্রীশ। এখানকার সীমানা রক্ষার জন্য পাকা ইঁটের দেওয়ালের মতো অচল পদার্থ চাই। ঐ পর্দাটা ভালো ঠেকছে না।
পূর্ণ। তোমাদের কথাগুলো কিছু রহস্যময় শোনাচ্ছে।
বিপিন। সে কথা ঠিক। রহস্য পদার্থটাই সর্বনেশে। চিরকুমারদের সকলের চেয়ে যে বড়ো শত্রু পর্দা - বেষ্টনীর মধ্যেই তার বাস।
শ্রীশ। আমাদের ব্রত হচ্ছে পর্দাটাকে আক্রমণ করা, তাকে ছিন্ন করে ফেলা। পর্দার ছায়ায় ছায়ায় ফেরে যে মায়ামৃগী আলো ফেললেই মরীচিকার মতো সে মিলিয়ে যাবে।
পূর্ণ। শ্রীশবাবু, মরীচিকা মেলাতে পারে, কিন্তু তৃষ্ণা তো মেলায় না।
শ্রীশ। কেন মেলাবে। ওটা থাকা চাই। তৃষ্ণা না থাকলে আমাদের ছোটাবে কিসে। কেবল জানা দরকার কোন্ পথে ছুটলে ফল পাওয়া যাবে।
নেপথ্যে গান। ওগো, তোরা কে যাবি পারে।
বিপিন। একটু আস্তে। গান শুনতে পাচ্ছ না? খাসা গান বটে।
পূর্ণ। ঐ গানটাও কি পর্দা নয়। ওর আড়ালে যে রহস্য গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে পথে বিপথে ছোটাবার ক্ষমতা তারও আছে।
বিপিন। থাক্ ভাই। তত্ত্বকথাটা এখন থাক্। একটু শুনতে দাও। খুব কাছের বাড়ি থেকেই গানটা আসছে, শুনেছি অক্ষয়বাবুর বাসা ঐখানেই।
শ্রীশ। গানের কথাটা বেশ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
নেপথ্যে গান
আমি ওগো, তোরা কে যাবি পারে।
আমি তরী নিয়ে বসে আছি নদী - কিনারে।