পুরবালা। মা, আমি কাশী যাব না।
হঠাৎ তাহার অসম্মতিতে বিপন্ন হইয়া জগত্তারিণী তাঁহার জামাতার মুখের দিকে চাহিলেন
অক্ষয়। ( শাশুড়ির মনের ভাব বুঝিয়া ) সে কি হয়। তুমি মার সঙ্গে না গেলে ওঁর অসুবিধে হবে। আচ্ছা মা, তুমি এগোও, আমি ওকে ঠিক সময়ে স্টেশনে নিয়ে যাব।
জগত্তারিণী নিশ্চিন্ত হইয়া প্রস্থান করিলেন। রসিকদাদা টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে
বিদায়কালীন বিমর্ষতা মুখে আনিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন
পুরুষবেশধারী শৈলের প্রবেশ
অক্ষয়। কে মশায়। আপনি কে?
শৈলবালা। আজ্ঞে মশায়, আপনার সহধর্মিণীর সঙ্গে আমার বিশেষ সম্বন্ধ আছে। ( অক্ষয়ের সঙ্গে শেকহ্যাণ্ড্ ) মুখুজ্জেমশায়, চিনতে তো পারলে না?
পুরবালা। অবাক করলি। লজ্জা করছে না?
শৈলবালা। দিদি, লজ্জা যে স্ত্রীলোকের ভূষণ — পুরুষের বেশ ধরতে গেলেই সেটা পরিত্যাগ করতে হয়। তেমনি আবার মুখুজ্জেমশায় যদি মেয়ে সাজেন উনি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না। রসিকদাদা, চুপ করে রইল যে?
রসিক। আহা, শৈল যেন কিশোর কন্দর্প। যেন সাক্ষাৎ কুমার, ভবানীর কোল থেকে উঠে এল। ওকে বরাবর শৈল বলে দেখে আসছি, চোখের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ; ও সুন্দরী কি মাঝারি কি চলনসই সে কথা কখনো মনেও ওঠে নি — আজ ঐ বেশটি বদল করেছে বলেই তো ওর রূপখানি ধরা দিলে। পুরোদিদি, লজ্জার কথা কী বলছিস, আমার ইচ্ছে করছে ওকে টেনে নিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করি।
অক্ষয়। ( স্নেহাভিষিক্ত গাম্ভীর্যের সহিত ছদ্মবেশিনীকে ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া ) সত্যি বলছি শৈল, তুমি যদি আমার শ্যালী না হয়ে আমার ছোটো ভাই হতে তা হলেও আমি আপত্তি করতুম না।
শৈলবালা। ( ঈষৎ বিচলিত হইয়া ) আমিও না মুখুজ্জেমশায়।
পুরবালা। ( শৈলকে বুকের কাছে টানিয়া ) এই বেশে তুই কুমার - সভার সভ্য হতে যাচ্ছিস?
শৈলবালা। অন্য বেশে হতে গেলে যে ব্যাকরণের দোষ হয় দিদি। কী বল রসিকদাদা।
রসিক। তা তো বটেই, ব্যাকরণ বাঁচিয়ে তো চলতেই হবে। ভগবান পাণিনি বোপদেব এঁরা কী জন্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ভাই, শ্রীমতী শৈলবালার উত্তর চাপকান প্রত্যয় করলেই কি ব্যাকরণ রক্ষে হয়।
অক্ষয়। নতুন মুগ্ধবোধে তাই লেখে। আমি লিখেপড়ে দিতে পারি, চিরকুমার - সভার মুগ্ধদের কাছে শৈল যেমন প্রত্যয় করাবে তাঁরা তেমনি প্রত্যয় যাবেন। কুমারদের ধাতু আমি জানি কিনা।
পুরবালা। ( একটুখানি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ) তোর মুখুজ্জেমশায়কে আর এই বুড়ো সমবয়সীটিকে নিয়ে তোর খেলা তুই আরম্ভ কর — আমি মার সঙ্গে কাশী চললুম।