নরসিঙ। শক্ত কাজে লাগিয়ে দিলেই তর্ক ঝাড়াই হয়ে যায়। তাই ওকে টেনে নিয়ে চলেছি।
বনোয়ারি। তাতে তোমাদের ভার হয়ে থাকব, কোনো কাজে লাগব না।
কঙ্কর। উত্তরকূটের ভার তুমি, তোমাকে বর্জন করবার উপায় খুঁজছি।
হুব্বা। বনোয়ারি খুড়ো, তুমি বিচার করে সব কথা বুঝতে চাও বলেই, যারা বিনা বিচারে বুঝিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে তোমার এত ঠোকাঠুকি বাধে। হয় তাদের প্রণালীটা কায়দা করে নাও, নয় নিজের প্রণালীটা ছেড়ে ঠাণ্ডা হয়ে বসে থাকো।
বনোয়ারি। তোমার প্রণালীটা কী।
হুব্বা। আমি গান গাই। সেটা এখানে খাটবে না বলেই সুর বের করছি নে—নইলে এতক্ষণে তান লাগিয়ে দিতুম।
কঙ্কর। (বনোয়ারির প্রতি) এখন তোমার অভিপ্রায় কী?
বনোয়ারি। আমি এক পা নড়ব না।
কঙ্কর। তাহলে আমরাই তোমাকে নড়াব। বাঁধো ওকে।
হুব্বা। একটা কথা বলি, কঙ্কর দাদা, রাগ করো না। ওকে বয়ে নিয়ে যেতে যে জোরটা খরচ করবে সেইটে বাঁচাতে পারলে কাজে লাগত।
কঙ্কর। উত্তরকূটের সেবায় যারা অনিচ্ছুক তাদের দমন করা একটা কাজ, সময় থাকতে এই কথাটা বুঝে দেখো।
হুব্বা। এরই মধ্যে বুঝে নিয়েছি।
নরসিঙ। ঐ-যে বিভূতি আসছে। যন্ত্ররাজ বিভূতির জয়!
কঙ্কর। কাজ অনেকটা এগিয়েছে, লোকও কম জোটে নি। কিন্তু তুমি এখানে কেন? তোমাকে নিয়ে সবাই যে উৎসব করবে।
বিভূতি। উৎসবে আমার শখ নেই।
নরসিঙ। কেন বলো তো।
বিভূতি। আমার কীর্তি খর্ব করবার জন্যেই নন্দিসংকটের গড় ভাঙার খবর ঠিক আজ এসে পৌঁছল। আমার সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা চলছে।
কঙ্কর। কার প্রতিযোগিতা যন্ত্ররাজ?
বিভূতি। নাম করতে চাই নে, সবাই জান। উত্তরকূটে তাঁর বেশি আদর হবে না আমার, এই হয়ে দাঁড়াল সমস্যা। একটা কথা তোমাদের জানা নেই— এর মধ্যে আমার কাছে কোনো পক্ষ থেকে দূত এসেছিল আমার মন ভাঙাতে; আমার মুক্তধারার বাঁধ ভাঙবে এমন শাসনবাক্যেরও আভাস দিয়ে গেল।
নরসিঙ। এত বড়ো কথা!
কঙ্কর। তুমি সহ্য করলে বিভূতি?
বিভূতি। প্রলাপবাক্যের প্রতিবাদ চলে না।
কঙ্কর। কিন্তু, বিভূতি, এত বেশি নিঃসংশয় হওয়া কি ভালো? তুমিই তো বলেছিলে বাঁধের বন্ধন দুই-এক জায়গায় আলগা আছে, তার সন্ধান জানলে অল্প একটুখানিতেই—