২ পথিক। আমি নিমকু, বাতিওআলা। রাজধানীতে সমস্ত রাত আলো জ্বলবে, বাঁতির দরকার। তুমি কে?
১ পথিক। আমি হুব্বা, যাত্রার দলে গান করি। পথের মধ্যে দেখতে পেলে কি আন্দু অধিকারীর দল?
নিমকু। অনেক মানুষ আসছে, কাকে চিনব?
হুব্বা। অনেক মানুষের মধ্যে তাকে ধোরো না, আমাদের আন্দু। সে একেবারে আস্ত একখানি মানুষ— ভিড়ের মধ্যে তাকে খুঁটে বের করতে হয় না— সবাইকে ঠেলে দেখা দেয়। দাদা, তোমার ঐ ঝুড়িটার মধ্যে বোধ করি বাতি অনেকগুলো আছে, একখানা দাও-না। ঘরের লোকের চেয়ে রাস্তার লোকের আলোর দরকার বেশি।
নিমকু। দাম কত দেবে?
হুব্বা। দামই যদি দিতে পারতুম তবে তো তোমার সঙ্গে হেঁকে কথা কইতুম, মিঠে সুর বের করব কেন?
নিমকু। রসিক বট হে।
হুব্বা। বাতি দিলে না, কিন্তু রসিক বলে চিনে নিলে। সেটা কম কথা নয়। রসিকের গুণ এই, ঘোর অন্ধকারেও তাকে চেনা যায়। উঃ, ঝিঁঝির ডাকে আকাশটার গা ঝিম্ ঝিম্ করছে। নাঃ বাতিওআলার সঙ্গে রসিকতা না করে ডাকাতি করলে কাজে লাগত।
পথিক। হেইয়ো!
হুব্বা। বাবা রে, চমকিয়ে দাও কেন?
পথিক। এখন চলো!
হুব্বা। চলব বলেই তো বেরিয়েছিলুম। দলের লোককে ছাড়িয়ে চলতে গিয়ে কি রকম অচল হয়ে পড়তে হয় সেই তত্ত্বটা মনে মনে হজম করবার চেষ্টা করছি।
পথিক। দলের লোক তৈরি আছে, এখন তুমি গিয়ে জুটলেই হবে।
হুব্বা। কথাটা কী বললে? আমরা তিনমোহনার লোক, আমাদের একটা বদ অভ্যেস আছে পষ্ট কথা না হলে বুঝতেই পারি নে। দলের লোক বলছ কাকে?
পথিক। আমরা চবুয়া গাঁয়ের লোক, পষ্ট বোঝাবার বদ অভ্যেসে হাত পাকিয়েছি। (ধাক্কা দিয়া) এইবার বুঝলে তো?
হুব্বা। উঃ, বুঝেছি। ওর সোজা মানে হচ্ছে, আমাকে চলতেই হবে মর্জি থাক্ আর না থাক্। কোথায় চলব? এবার একটু মোলায়েম করে জবাব দিয়ো। তোমার আলাপের প্রথম ধাক্কাতেই আমার বুদ্ধি পরিষ্কার হয়ে এসেছে।
পথিক। শিবতরাইয়ে যেতে হবে।
হুব্বা। শিবতরাইয়ে? এই অমাবস্যারাত্রে? সেখানে পালাটা কিসের?
পথিক। নন্দিসংকটের ভাঙা গড় ফিরে গাঁথবার পালা।
হুব্বা। ভাঙা গড় আমাকে দিয়ে গাঁথাবে? দাদা, অন্ধকারে আমার চেহারাটা দেখতে পাচ্ছ না বলেই এত বড়ো শক্ত কথাটা বললে। আমি হচ্ছি—
পথিক। তুমি যেই হও-না কেন, দুখানা হাত আছে তো?