রাজধর। এবার তোমার সময় এসেছে, সেই অপমানের শোধ দেবার জোগাড় করো।
ধুরন্ধর। সময় কখন কার আসে সেটা যে পরিষ্কার বোঝা যায় না। দুর্বল লোকের পক্ষে অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো; শোধ তোলবার শখটা তার পক্ষে নিরাপদ নয়। ঐ-যে ওঁরা সব আসছেন। আমি পালাই। তোমার সঙ্গে আমাকে একত্রে দেখলেই ইন্দ্রকুমার যে কথাগুলি বলবেন তাতে মধুবর্ষণ করবে না, আর ইশা খাঁও যে তোমার চেয়ে আমার প্রতি বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করবেন এমন ভরসা আমার নেই।
ইন্দ্রকুমার। কী হে প্রতাপ, ব্যাপারখানা কী? আমাকে হঠাৎ অস্ত্রশালার দ্বারে যে ডাক পড়ল?
প্রতাপ। মধ্যম বউরানীমা আপনাকে খবর দিতে বললেন যে, আপনার অস্ত্রশালার মধ্যে একটি জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন, তিনি বায়ু-অস্ত্র না নাগপাশ না কী সেটা সন্ধান নেওয়া উচিত।
ইন্দ্রকুমার। বল কী প্রতাপ, কলিযুগেও এমন ব্যাপার ঘটে নাকি?
প্রতাপ। আজ্ঞে, কুমার, কলিযুগেই ঘটে। সত্যযুগে নয়। দরজাটা খুললেই সমস্ত বুঝতে পারবেন।
ইন্দ্রকুমার। তাই তো বটে, পায়ের শব্দ শুনি যে! (দ্বার খুলিতেই রাজধরের নিষ্ক্রমণ) একি! রাজধর যে! হা হা হা হা, তোমাকে অস্ত্র বলে কেউ ভুল করেছিল নাকি! হা হা হা হা!
রাজধর। মেজবউরানী তামাশা করে আমাকে এখানে বন্ধ করে রেখেছিলেন।
ইন্দ্রকুমার। এ ঘরটা তো সহজ তামাশার ঘর না, এখানকার তামাশা যে ভয়ংকর ধারালো তামাশা-এখানে তোমার আগমন হল যে!
রাজধর। আজ রাত্রে শিকারে যাব বলে অস্ত্র খুঁজতে গিয়ে দেখলুম আমার অস্ত্রগুলোতে সব মর্চে পড়ে রয়েছে। কালকের অস্ত্রপরীক্ষার জন্যে সেগুলোকে সমস্ত সাফ করতে দিয়ে এসেছি। তাই বউরানীর কাছে এসেছিলুম তোমার কিছু অস্ত্র ধার নেবার জন্যে।
ইন্দ্রকুমার। তাই তিনি বুঝি সমস্ত অস্ত্রশালাসুদ্ধই তোমাকে ধার দিয়ে বসে আছেন! হা হা হা হা! তা বেরিয়ে এলে কেন? যাও, ঢুকে পড়ো। ধারের মেয়াদ ফুরিয়েছে নাকি? হা হা হা হা!
রাজধর। হাসো, হাসো। এ তামাশায় আমিও হাসব। কিন্তু এখন নয়। চললুম দাদা, আজ আর শিকারে যাচ্ছি নে।
প্রতাপ। ছোটোকুমারকে নিয়ে আপনাদের এ-সমস্ত ঠাট্টা আমার ভালো বোধ হয় না।
ইন্দ্রকুমার। ঠাট্টা নিয়ে ভয় কিসের? উনিও ঠাট্টা করুন-না।
প্রতাপ। ওঁর ঠাট্টা বড়ো সহজ হবে না।