বিভা। মোহন, তোর কথা আমি বুঝতে পারছি নে, কী হয়েছে আমাকে সত্যি করে বল্। মহারাজ কি রাগ করেছেন?
রামমোহন। রাগ করেছেন বৈকি।
বিভা। তিনি তো আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
রামমোহন। দেরি হয়ে গেছে মা, দেরি হয়ে গেছে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সময় গেলে আর ফেরে না।
বিভা। কে বললে ফেরে না। আমি তপস্যা করে ফেরাব, আমি জীবন মন দিয়ে ফেরাব। মোহন, এখনই তুই আমাকে নিয়ে যা। দেরি যদি হয়ে থাকে, আর এক মুহূর্ত দেরি করব না।
রামমোহন। যুবরাজ কোথায় গেছেন?
বিভা। তিনি এখনই আসবেন।
রামমোহন। তিনি ফিরে আসুন-না।
বিভা। না মোহন, আর বিলম্ব নয়। তিনি কি খবর পেয়েছেন আমি এসেছি। দাদা বললেন, তিনি নৌকার ছাত থেকে দেখেছেন ময়ূরপংখি সাজানো হচ্ছে।
রামমোহন। হাঁ, সাজানো হচ্ছে বটে —
বিভা। এখনও কি সাজানো শেষ হয় নি।
রামমোহন। ঐ ময়ূরপংখির সাজসজ্জায় আগুন লাগুক।
বিভা। মোহন, তোর মুখে এ কী কথা! তুই যখন আনতে গেলি আসতে পারি নি বলে এত রাগ করেছিস? তুইও আমার দুঃখ বুঝতে পারিস নি মোহন?
রামমোহন নিরুত্তর
এই দেখ্, তোর দেওয়া সেই শাঁখাজোড়া পরে এসেছি — আজকের দিনে তুই আমার উপর রাগ করিস নে।
রামমোহন। আমাকে আর দগ্ধ কোরো না। মিথ্যে দিয়ে তোমার কাছে আর চাপা দিতে পারলুম না। মা জননি, এ রাজ্যের লক্ষ্মী তুমি, কিন্তু এ রাজ্যে তোমার আজ আর স্থান নেই। চলো মা, তুমি ফিরে চলো — তোমার এই পাদপদ্মের দাস, এই অধম সন্তান তোমার সঙ্গে যাবে।
বিভা। মোহন, যা তোর বলবার আছে সব তুই বল্। আমি যে কত দুঃখ সইতে পারি তা কি তুই জানিস নে?
রামমোহন। সন্তান যখন ডাকতে গেল তখন কেন এলি নে — তখন কেন এলি নে — আমার পোড়া কপাল, তোকে কেন আনতে পারলুম না।
বিভা। ওরে মোহন, জগতে এমন কোনো সুখ নেই যার লোভে আমি সেদিন দাদাকে ফেলে আসতে পারতুম — এতে আমার কপালে যা থাকে তাই হবে।
রামমোহন। তবে শোন্ মা, সেই ময়ূরপংখি তোর জন্যে নয়।
বিভা। নাই হল মোহন, দুঃখ কিসের। আমি হেঁটে চলে যাব।
রামমোহন। যাবি কোথায়। সেখানে যে আজ আর-এক রানী আসছে।
বিভা। আর-এক রানী!
রামমোহন। হাঁ, আর-এক রানী। আজ মহারাজের বিবাহ।
বিভা। ওঃ — আজ বিবাহের লগ্ন!