বিক্রম। যুদ্ধ নয়।
মন্ত্রী। তবে?
বিক্রম। সন্ধি।
মন্ত্রী। মহারাজ কী বললেন, সন্ধি?
বিক্রম। হাঁ, সন্ধি করব। ওরাই হবে কাশ্মীর-অভিযানে আমার সঙ্গী।
মন্ত্রী। সন্ধি করবে! মহারাজ, ক্ষোভের মুখেই এমন কথা বলছ।
বিক্রম। তোমার মন্ত্রণা দেবার সময় চলে গেছে। এখন বিনা বিচারে আমার আদেশ পালন করো।
মন্ত্রী। তবু বলতে হবে। যা সংকল্প করেছ তাতে রাজ্যের সমস্ত প্রজা উন্মত্ত হয়ে উঠবে।
বিক্রম। উন্মত্ততা গোপন থাকলে স্থায়ী হয়ে থাকে— উন্মত্ততা প্রকাশ হলে তাকে দমন করা সহজ। সেজন্যে আমার কোনো চিন্তা নেই। দূতকে ডেকে পাঠাও।
বিপাশা। গান
পুষ্পধনু, ভাসাও তরী নন্দনতীর হতে।
মহারাজ বলেছিলেন এইখান থেকে যাত্রারম্ভ হবে। মাধবীবিতানে তিনি আমাদের সঙ্গে যাবেন। কই, তাঁকে তো দেখছি নে।
প্রথমা। আমাদের গান শুনতে পেলেই দেখা দেবেন।
পলাশকলি দিকে দিকে
তোমার আখর দিল লিখে,
চঞ্চলতা জাগিয়ে দিল অরণ্যে পর্বতে।
দ্বিতীয়া। কিন্তু মহারাজ তো এলেন না— গোধূলিলগ্ন বয়ে যাচ্ছে। ঐ তো দিগন্তে চাঁদের রেখা দেখা দিল।
বিপাশা। লগ্ন এলেই কী আর গেলেই কী, আমাদের তাতে কী আসে যায়। গান থামাস নে। মহারাজ বলেছেন উৎসবকে জাগিয়ে রাখতে, একটুও যেন ম্রিয়মাণ না হয়।
আকাশপারে পেতে আছে একলা আসনখানি—
নিত্যকালের সেই বিরহীর জাগল আশার বাণী।
পাতায় পাতায় ঘাসে ঘাসে
নবীন প্রাণের পত্র আসে,
পলাশ-জবায় কনকচাঁপায় অশোকে-অশ্বথে॥
বিপাশা। মহারাজ, সময় হয়েছে।
বিক্রম। হাঁ সময় হয়েছে— এবার ফেলে দাও এ-সব, দ'লে ফেলে দাও ধুলোয়।
প্রথমা। মহারাজ কী করলেন, এ যে দেবতার মূর্তি।
বিক্রম। এমন অক্ষম, এমন ব্যর্থ, এমন মিথ্যা, ওকে বল দেবতা! বিড়ম্বনা! এই আমি ওকে পায়ের তলায় দলছি। দ্বারী!
দ্বারী। কী মহারাজ।
বিক্রম। নিবিয়ে দিতে বলে দাও এই-সব আলোর মালা। দ্বারের কাছে বাজিয়ে দাও রণভেরী।