সুকুমারী। তা হতে পারে। তোমার কথা তুমি জান। কিন্তু আমি কখনো ওকে এমন কথা বলি নি যে, তুমি তোমার মেসোর ঘরে পায়ের উপর পা দিয়ে গোঁফে তা দাও আর লম্বা কেদারায় বসে বসে আমার বাছার উপর বিষদৃষ্টি দিতে থাকো।
শশধর। না, ঠিক ঐ কথাগুলো তুমি তাকে মাথার দিব্য দিয়ে শপথ করিয়ে নাও নি — অতএব তোমাকে দোষ দিতে পারি নে। এখন কী করতে হবে বলো।
সুকুমারী। সে তুমি যা ভালো বোঝ তাই করো। কিন্তু আমি বলছি, সতীশ যতক্ষণ এ-বাড়িতে থাকবে খোকাকে কোনোমতে বাইরে যেতে দিতে পারব না। এ তো আমারই আপন বোনের ছেলে। কিন্তু আমি ওকে এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস করি নে — এ আমি তোমাকে স্পষ্টই বললেম।
সতীশ। কাকে বিশ্বাস কর না, মাসিমা। আমাকে? আমি তোমার খোকাকে সুযোগ পেলে গলা টিপে মারব, এই তোমার ভয়? যদি মারি তবে তুমি তোমার বোনের ছেলের যে-অনিষ্ট করেছ, তার চেয়ে ওর কি বেশি অনিষ্ট করা হবে। কে আমাকে ছেলেবেলা হতে নবাবের মতো শৌখিন করে তুলেছে এবং আজ ভিক্ষুকের মতো পথে বের করলে। কে আমাকে পিতার শাসন থেকে বিশ্বের লাঞ্ছনার মধ্যে টেনে আনলে। কে আমাকে —
সুকুমারী। ওগো, শুনছ? তোমার সামনে আমাকে এমনি করে অপমান করে? নিজের মুখে বললে কিনা খোকাকে গলা টিপে মারবে? ও মা, কী হবে গো। আমি কালসাপকে নিজের হাতে দুধকলা দিয়ে পুষেছি।
সতীশ। দুধকলা আমারও ঘরে ছিল — সে দুধকলায় আমার রক্ত বিষ হয়ে উঠত না — তা থেকে চিরকালের মতো বঞ্চিত করে তুমি যে-দুধকলা আমাকে খাইয়েছ, তাতে আমার বিষ জমে উঠেছে। সত্যকথাই বলছ, এখন আমাকে ভয় করাই চাই — এখন আমি দংশন করতে পারি।
বিধুমুখী। কী সতীশ, কী হয়েছে, তোকে দেখে যে ভয় হয়। অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন। আমাকে চিনতে পারছিস্ নে? আমি তোর মা, সতীশ?
সতীশ। মা, তোমাকে মা বলব কোন্ মুখে। মা হয়ে কেন তুমি আমাকে জেল থেকে ফিরিয়ে আনলে। সে কি মাসির ঘরের চেয়ে ভয়ানক।
শশধর। আঃ সতীশ। চলো চলো — কী বকছ, থামো।
সুকুমারী। নাও, তোমরা বোঝাপড়া করো — আমার কাজ আছে।
শশধর। সতীশ, একটু ঠাণ্ডা হও। তোমার প্রতি অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে, সে কি আমি জানি নে। তোমার মাসি রাগের মুখে কী বলছেন, সে কি অমন করে মনে নিতে আছে। দেখো, গোড়ায় যা ভুল হয়েছে তা এখন যতটা সম্ভব প্রতিকার করা যাবে, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
সতীশ। মেসোমশায়, প্রতিকারের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। মাসিমার সঙ্গে আমার এখন যেরূপ সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে, তাতে তোমার ঘরের অন্ন আমার গলা দিয়ে আর গলবে না। এতদিন তোমাদের যা খরচ করিয়েছি তা যদি শেষ কড়িটি পর্যন্ত শোধ করে দিতে না পারি তবে আমার মরেও শান্তি নেই। প্রতিকার যদি কিছু থাকে তো সে আমার হাতে, তুমি কী প্রতিকার করবে।
শশধর। না, শোনো সতীশ — একটু স্থির হও। তোমার যা কর্তব্য সে তুমি পরে ভেবো; তোমার সম্বন্ধে আমরা যে-অন্যায়