প্রথম দৃশ্য
সিংহগড়
ত্রিবেদী। তা বাপু, তুমি যদি চক্ষু অমন রক্তবর্ণ কর তাহলে আমার আপ্তবিশ্রুতি হবে। ভক্তবৎ সল হরি! দেবদত্ত আর মন্ত্রী আমাকে অনেক করে শিখিয়ে দিয়েছে — কী বলছিলেম ভালো? আমাদের রাজা কালভৈরবের পুজো -নামক একটা উপলক্ষ করে—
জয়সেন। উপলক্ষ করে?
ত্রিবেদী। হাঁ, তা নয় উপলক্ষই হল, তাতে দোষ হয়েছে কী? মধুসূদন! তা তোমার চিন্তা হতে পারে বটে। উপলক্ষ শব্দটা কিঞ্চিৎ কাঠিন্যরসাসক্ত হয়ে পড়েছে — ওর যা যথার্থ অর্থ সেটা নিরাকার করতে অনেকেরই গোল ঠেকে দেখেছি।
জয়সেন। তাই তো ঠাকুর, ওর যথার্থ অর্থটাই ঠাওরাচ্ছি।
ত্রিবেদী। রাম নাম সত্য! তা নাহয় উপলক্ষ না বলে উপসর্গ বলা গেল। শব্দের অভাব কী বাপু? শাস্ত্রে বলে শব্দ ব্রহ্ম। অতএব উপলক্ষই বল আর উপসর্গই বল অর্থ সমানই রইল।
জয়সেন। তা বটে। রাজা যে আমাদের আহ্বান করেছেন তার উপলক্ষ এবং উপসর্গ পর্যন্ত বোঝা গেল — কিন্তু তার যথার্থ কারণটা কী খুলে বলো দেখি।
ত্রিবেদী। ঐটে বলতে পারলুম না বাপু — ঐটে আমায় কেউ বুঝিয়ে বলে নি। হরি হে!
জয়সেন। ব্রাহ্মণ, তুমি বড়ো কঠিন স্থানে এসেছ, কথা গোপন কর তো বিপদে পড়বে।
ত্রিবেদী। হে ভগবান! হ্যাঁ দেখো বাপু, তুমি রাগ কোরো না, তোমার স্বভাবটা নিতান্ত যে মধুমত্ত মধুকরের মতো তা বোধ হচ্ছে না।
জয়সেন। বেশি বোকো না ঠাকুর, যথার্থ কারণ যা জান বলে ফেলো।
ত্রিবেদী। বাসুদেব! সকল জিনিসেরই কি যথার্থ কারণ থাকে? যদি-বা থাকে তো সকল লোকে কি টের পায়? যারা গোপনে পরামর্শ করেছে তারাই জানে। মন্ত্রী জানে, দেবদত্ত জানে। তা বাপু, তুমি অধিক ভেবো না, বোধ করি সেখানে যাবামাত্রই যথার্থ কারণ অবিলম্বে টের পাবে।
জয়সেন। মন্ত্রী তোমাকে আর কিছুই বলে নি?
ত্রিবেদী। নারায়ণ নারায়ণ! তোমার দিব্য, কিছু বলে নি। মন্ত্রী বললে, ‘ঠাকুর, যা বললুম তা ছাড়া একটি কথা বোলো না। দেখো, তোমাকে যেন একটুও সন্দেহ না করে। ’আমি বললুম, ‘হে রাম! সন্দেহ কেন করবে? তবে বলা যায় না! আমি তো সরলচিত্তে বলে যাব, যিনি সন্দগ্ধ হবেন তিনি হবেন!’ হরি হে, তুমিই সত্য।
জয়সেন। পুজো উপলক্ষে নিমন্ত্রণ, এ তো সামান্য কথা, এতে সন্দেহ হবার কী কারণ থাকতে পারে?