সে সুখের দিন? সেই প্রথম মিলন —
প্রথম প্রেমের ছটা, দেখিতে দেখিতে
সমস্ত হৃদয়ে দেহে যৌবনবিকাশ,
সেই নিশি-সমাগমে দুরুদুরু হিয়া —
নয়ন-পল্লবে লজ্জা ফুলদলপ্রান্তে
শিশির-বিন্দুর মতো, অধরের হাসি
নিমেষে জাগিয়া ওঠে, নিমেষে মিলায়,
সন্ধ্যার বাতাস লেগে কাতরকম্পিত
দীপশিখাসম, নয়নে নয়নে হয়ে
ফিরে আসে আঁখি, বেধে যায় হৃদয়ের
কথা, হাসে চাঁদ কৌতুকে আকাশে, চাহে
নিশীথের তারা, লুকায়ে জানালা-পাশে —
সেই নিশি-অবসানে আঁখি ছলছল,
সেই বিরহের ভয়ে বদ্ধ আলিঙ্গন,
তিলেক বিচ্ছেদ লাগি কাতর হৃদয়।
কোথা ছিল গৃহকাজ! কোথা ছিল, প্রিয়ে,
সংসারভাবনা?
সুমিত্রা। তখন ছিলাম শুধু
ছোট দুটি বালক বালিকা, আজি মোরা
রাজা রানী।
বিক্রমদেব। রাজা রানী! কে রাজা? কে রানী?
নহি আমি রাজা। শূন্য সিংহাসন কাঁদে।
জীর্ণ রাজকার্যরাশি চূর্ণ হয়ে যায়
তোমার চরণতলে ধূলির মাঝারে।
সুমিত্রা। শুনিয়া লজ্জায় মরি। ছি ছি মহারাজ,
এ কি ভালোবাসা? এ যে মেঘের মতন
রেখেছে আচ্ছন্ন করে মধ্যাহ্ন-আকাশে
উজ্জ্বল প্রতাপ তব। শোনো প্রিয়তম,
আমার সকলি তুমি, তুমি মহারাজা,
তুমি স্বামী — আমি শুধু অনুগত ছায়া,
তার বেশি নই। আমারে দিয়ো না লাজ,
আমারে বেসো না ভালো রাজশ্রীর চেয়ে।