কিনু। তোমার কী ঠাকুর! তুমি তো রাজবাড়ির সিধে খেয়ে খেয়ে ফুলছ— আমাদের পেটে নাড়ীগুলো জ্বলে জ্বলে ম'ল— আমরা কি বড়ো সুখে চেঁচাচ্ছি!
মন্সুখ। আজকালের দিনে আস্তে বললে শোনে কে? এখন চেঁচিয়ে কথা কইতে হয়।
কুঞ্জর। কান্নাকাটি ঢের হয়েছে, এখন দেখছি অন্য উপায় আছে কি না।
দেবদত্ত। কী বলিস রে! তোদের বড়ো আস্পর্ধা হয়েছে। তবে শুনবি? তবে বলব?—
নসমানসমানসমানসমাগমমাপ সমীক্ষ্য বসন্তনভঃ।
ভ্রমদভ্রমদভ্রমদভ্রমদ ভ্রমরচ্ছলতঃ খলু কামিজনঃ॥
হরিদীন। ও বাবা, শাপ দিচ্ছে নাকি?
দেবদত্ত। ( মন্নুর প্রতি) তুমি তো ভদ্রলোকের ছেলে, তুমি তো শাস্তর বোঝ— কেমন, এ ঠিক কথা কি না? নস মানস মানস মানসং—
মন্নুরাম। আহা ঠিক! শাস্ত্র যদি চাও তো এই বটে। তা, আমিও তো ঠিক ওই কথাটাই বোঝাচ্ছিলুম।
দেবদত্ত। ( নন্দের প্রতি) নমস্কার! তুমি তো ব্রাহ্মণ দেখছি। কী বল ঠাকুর, পরিণামে এই সব মূর্খরা ‘ ভ্রমদভ্রমদভ্রমৎ ' হয়ে মরবে না?
নন্দ। বরাবর তাই বলছি, কিন্তু বোঝে কে? ছোটোলোক কিনা।
দেবদত্ত। ( মন্সুখের প্রতি) তোমাকে এর মধ্যে বুদ্ধিমানের মতো দেখাচ্ছে, আচ্ছা, তুমি বলো দেখি, কথাগুলো কি ভালো হচ্ছিল? ( কুঞ্জরের প্রতি) আর তোমাকেও তো বেশ ভালোমানুষ দেখছি হে, তোমার নাম কী?
কুঞ্জর। আমার নাম কুঞ্জরলাল — কাঞ্জিলাল আমার ভাইপোর নাম।
দেবদত্ত। ওঃ! তোমারই ভাইপোর নাম কাঞ্জিলাল বটে? তা, আমি রাজার কাছে বিশেষ করে তোমাদের নাম করব।
হরিদীন। আর আমাদের কী হবে?
দেবদত্ত। তা আমি বলতে পারি নে বাপু! এখন তো তোরা কান্না ধরেছিস — এই একটু আগে আর-এক সুর বের করেছিলি। সে কথাগুলো কি রাজা শোনে নি? রাজা সব শুনতে পায়।
অনেকে। দোহাই ঠাকুর, আমরা কিছু বলি নি, ওই কাঞ্জুলাল না মাঞ্জুলাল অন্তরের কথা পেড়েছিল।
কুঞ্জর। চুপ কর্। আমার নাম খারাপ করিস নে। আমার নাম কুঞ্জরলাল। তা, মিছে কথা বলব না, আমি বলছিলুম, ‘যেমন শাস্তর আছে তেমনি অস্তরও আছে,— রাজা যদি শাস্তরের দোহাই না মানে, তখন অস্তর আছে। ’ কেমন বলেছি ঠাকুর?
দেবদত্ত। ঠিক বলেছ, তোমার উপযুক্ত কথাই বলেছ। অস্ত্র কী? না, বল। তা তোমাদের বল কী? না, ‘দুর্বলস্য বলং রাজা।’ কি না, রাজাই দুর্বলের বল। আবার, ‘বালানাং রোদনং বলং’। রাজার কাছে তোমরা বালক বৈ নও। অতএব এখানে কান্নাই তোমাদের অস্ত্র। অতএব শাস্তর যদি না খাটে তো তোমাদের অস্ত্র আছে কান্না। বড়ো বুদ্ধিমানের মতো কথা বলেছ। প্রথমে আমাকেই ধাঁধা লেগে গিয়েছিল। তোমার নামটা মনে রাখতে হবে। কী হে, তোমার নাম কী?
কুঞ্জর। আমার নাম কুঞ্জরলাল। কাঞ্জিলাল আমার ভাইপো।
অন্য সকলে। ঠাকুর, আমাদের মাপ করো ঠাকুর, মাপ করো।