ধনঞ্জয়। রাস্তায়।
প্রতাপাদিত্য। বৈরাগী, আমার এক-এক বার মনে হয় তোমার ওই রাস্তাই ভালো— আমার এই রাজ্যটা কিছু না।
ধনঞ্জয়। মহারাজ, রাজ্যটাও তো রাস্তা। চলতে পারলেই হল! ওটাকে যে পথ বলে জানে সেই তো পথিক; আমরা কোথায় লাগি! তাহলে অনুমতি যদি হয় তো এবারকার মতো বেড়িয়ে পড়ি।
প্রতাপাদিত্য। আচ্ছা, কিন্তু মাধবপুরে যেয়ো না।
ধনঞ্জয়। সে কেমন করে বলি! যখন নিয়ে যাবে তখন কার বাবার সাধ্য বলে যে যাব না!
উদয়াদিত্য। মহারাজ যে দাদামশায়কে সহজে নিষ্কৃতি দেবেন তার সম্ভাবনা নেই। আমি এখানে থেকে তাঁর এই বিপদ ঘনিয়ে তোলা কোনোমতেই উচিত হচ্ছে না। আর দেরি করা না। আজই আমাকে পালাতে হবে। দাদামশায়কে বলে যাওয়া মিথ্যা। তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না। উঃ-আজ সমস্ত দিনটা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে, দুই-এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে,— দেখি দাদামহাশয় কী করছেন, তাঁকে— ওদিকে কে একটা লোক সরে গেল, ও আবার কে?
পশ্চাৎ হইতে মুক্তিয়ার খাঁর প্রবেশ ও সেলাম
সম্মুখ হইতে দুইজন সৈন্যের প্রবেশ ও সেলাম
উদয়াদিত্য। কে, মুক্তিয়ার খাঁ, কী খবর।
মুক্তিয়ার। জনাব, আমাদের মহারাজের কাছ থেকে আদেশ নিয়ে এসেছি।
উদয়াদিত্য। কী আদেশ মুক্তিয়ার।
উদয়াদিত্যের হস্তে মুক্তিয়ার খাঁর আদেশপত্র প্রদান
উদয়াদিত্য। এর জন্য এত সৈন্যের প্রয়োজন কী? আমাকে একখানা পত্র লিখে আদেশ করলেই তো আমি যেতুম। আমি তো আপনিই যাচ্ছিলুম, যাব বলেই স্থির করেছি। তবে আর বিলম্বে প্রয়োজন কী? এখনই চলো। এখনই যশোরে ফিরে যাই।
মুক্তিয়ার। ( করজোড়ে) এখনই ফিরতে পারব না তো হুজুর, আমার যে আরো কাজ আছে।
উদয়াদিত্য। ( ভীত হইয়া) কেন! কী কাজ?
মুক্তিয়ার। আরো এক আদেশ আছে, তা পালন না করে যেতে পারব না।
উদয়াদিত্য। কী আদেশ? বলছ না কেন?
মুক্তিয়ার। রায়গড়ের রাজার প্রতি মহারাজা প্রাণদণ্ডের আদেশ করেছেন।
উদয়াদিত্য। ( চমকিয়া উচ্চস্বরে) না,— করেন নি! মিথ্যা কথা!
মুক্তিয়ার। আজ্ঞে যুবরাজ মিথ্যে নয়। আমার কাছে মহারাজের স্বাক্ষরিত পত্র আছে।
উদয়াদিত্য। ( সেনাপতির হাত ধরিয়া) মুক্তিয়ার খাঁ, তুমি ভুল বুঝেছ। মহারাজ আদেশ করেছেন যে যদি উদয়াদিত্যকে না পাও তা হলে বসন্ত রায়ের— আমি যখন আপনি ধরা দিচ্ছি, তখন আর কী? আমাকে এখনই নিয়ে চলো— এখনই নিয়ে চলো— বন্দী