জায়া। তোমার মেয়েটির ঐ স্বভাব — সে যাকে ভালোবাসে তাকেই জ্বালাতন করে। দেখো-না বিড়ালছানাটাকে নিয়ে কী কাণ্ডটাই করে। কিন্তু আশ্চর্য এই, তবু তো ওকে কেউ ছাড়তে চায় না।
নলিনী। মা, একবার সতীশবাবুর বাড়ি যাবে না? তাঁর মা বোধ হয় খুব কাতর হয়ে পড়েছেন। বাবা, আমি একবার তাঁর কাছে যেতে চাই।
সতীশ। বাবার শাপ এখনো ছাড়ে নি মা, এখনো ছাড়ে নি। তিনি আমার ভাগ্যের উপরে এখনো চেপে বসে আছেন।
বিধুমুখী। আমাদের যা করবার তা তো করেছি, গয়াতে তাঁর সপিণ্ডিকরণ হয়ে গেল — তোর মাসির কল্যাণে ব্রাক্ষ্মণবিদায়েরও ভালো আয়োজন হয়েছিল।
সতীশ। সেই পুণ্যফল মাসির কপালেই ফলল। নইলে —
বিধুমুখী। তাই তো। নইলে এত বয়সে তাঁর ছেলে হবে, এমন সর্বনেশে কথা স্বপ্নেও ভাবি নি।
সতীশ। অন্যায় অন্যায়! বাবার সম্পত্তি পেতে পারতুম, তার থেকে বঞ্চিত হলুম; তার পরে আবার — কী অন্যায়।
বিধুমুখী। অন্যায় নয় তো কী। নিজের বোনপোকে এমন করেও ঠকালে? শেষকালে দয়ালডাক্তারের ওষুধ তো খাটল; আমরা কালীঘাটে এত মানত করলুম, তার কিছুই হল না। একেই বলে কলিকাল। একমনে ভগবানকে ডাক্ — তিনি যদি এখনো —
সতীশ। মা, এঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল — কিন্তু যে-রকম অন্যায় হল, তাতে — ঈশ্বরের কাছে — তিনি দয়া করে যেন —
বিধুমুখী। আহা, তাই হোক — নইলে তোর উপায় কী হবে, সতীশ। হে ভগবান, তুমি যেন —
সতীশ। এ যদি না হয় ঈশ্বরকে আমি আর মানব না; কাগজে নাস্তিকতা প্রচার করব। কে বলে তিনি মঙ্গলময়।
বিধুমুখী। আরে চুপ চুপ, এখন অমন কথা মুখে আনতে নেই। তিনি দয়াময়, তাঁর দয়া হলে কী না ঘটতে পারে। — সতীশ, আজ বুঝি ওদের ওখানে যাচ্চিস?
সতীশ। হাঁ।
বিধুমুখী। তোর সেই সাহেবের দোকানের কাপড় পরিস্ নি যে বড়ো?
সতীশ। সে-সব পুড়িয়ে ফেলেছি।
বিধুমুখী। সে আবার কবে হল।
সতীশ। অনেক দিন। টেনিস্পার্টিতে নলিনীকে কথা দিয়ে এসেছিলেম।
বিধুমুখী। সে যে অনেক দামের!
সতীশ। নইলে পোড়াবার মজুরি পোষাবে কেন। স্বর্ণলঙ্কারও তো অনেক দাম ছিল।